দুই যুগেও বাড়েনি কোস্ট গার্ডের সক্ষমতা

কোস্ট গার্ড বাহিনী

দেশের সীমান্ত রক্ষায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কাজ করলেও জলসীমা তথা গোট উপকূলীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। সমুদ্র সীমানা পাহারায় বিজিবি’র সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করে জলসীমা ও উপকূলীয় নিরাপত্তা রক্ষায় ১৯৯৫ সালে কোস্ট গার্ডের যাত্রা শুরু হয়। দিনে দিনে সমুদ্র সীমানা বেড়েছে। তবে দুই যুগেও বাড়েনি বাহিনীর সক্ষমতা।

কোস্ট গার্ড বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে সরকার। এ বাহিনীর সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করতে ২০১৫-২০৩০ সাল মেয়াদে ‘স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী’ পরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার। এসব পরিকল্পনার কয়েকটি বাস্তবায়নাধীন আছে বলে জানান কোস্টগার্ড কর্মকর্তারা।

১৯৯৪ সালে কোস্টগার্ড বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতীয় জলসীমা ও উপকূলীয় অঞ্চলে জলদস্যুতা দমন, অবৈধ চোরাচালন রোধ, মৎস্য, তেল, গ্যাস ও বনজ সম্পদ রক্ষাসহ পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ এবং সমুদ্র বন্দরের নিরাপত্তা সহায়তা দেওয়ার  মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাই এ বাহিনী লক্ষ্য। বাহিনী প্রতিষ্ঠার প্রায় দুই যুগ পার হলেও এখনও কোস্টগার্ড স্বয়ংসম্পূর্ণ বাহিনী হিসেবে গড়ে ওঠেনি। কোস্ট গার্ডের দুর্বলতাগুলো কাজে লাগিয়ে দেশি-বিদেশি চোরাকারবারিরা সমুদ্র এলাকা ব্যবহার করে মানব ও মাদক পাচারসহ নানা অপরাধ করে যাচ্ছে। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে মানব ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধে সত্যিকার অর্থেই কোস্ট গার্ডের সক্ষমতা খুবই কম বলে মনে করেন কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তারাও। জনবল ও জলযানসহ অবকাঠামোগত অসুবিধার কারণেই সাগর পথে অপরাধ দমনে কার্যকর কোনও ভূমিকা রাখতে পারছে না কোস্ট গার্ড।

কোস্টগার্ড সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমা নির্ধারিত হওয়ায় এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সামুদ্রিক এলাকা বেড়ে যায়। ২০১৬ সালে এ বাহিনীকে পূর্ণাঙ্গ বাহিনীর মর্যাদা দিয়ে জাতীয় সংসদে আইন পাশ করা হয়। এর আগে এ বাহিনীর নিজস্ব কোনও জনবলও ছিল না। নৌবাহিনী থেকে প্রেষণে নিযুক্ত স্বল্প সংখ্যক কর্মকর্তা ও নাবিক এবং নৌবাহিনী থেকে অস্থায়ীভাবে পাওয়া দু’টি প্যাট্রোল ক্রাফট সিজিএস তৌহিদ এবং সিজিএস পাবনা নিয়ে ১৯৯৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এ বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা তিন হাজার ৯৫৩ জন। যাদের সবাই নৌ বাহিনী থেকে প্রেষণে কর্মরত।

জনবল সংকটের পাশাপাশি জলপথের নিরাপত্তা টহলে জলযানেরও অভাব প্রকট এ বাহিনীর। তিন হাজার ৩৩৯ জনের এ বাহিনীতে ছোট জাহাজ রয়েছে ১৪টি। গ্রীষ্মকালে সমুদ্র যখন উত্তাল থাকে, তখন এসব জাহাজ দিয়ে গভীর সমুদ্রে টহল দেওয়া একেবারেই দুঃসাধ্য। ছোট নদ-নদীতে টহলের জন্য স্পিডবোট রয়েছে মাত্র ৯৩টি। এরইমধ্যে ইতালি থেকে দুটি বড় জাহাজ নিয়ে আসা হয়েছে এ বাহিনীর জন্য। আরও দুটি জাহাজ এ বছরের মধ্যেই যুক্ত হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

be2f8bbe9f3e237c3b1b2b8f37d3dff1

এয়ার উইং গঠন করে বাহিনীতে হেলিকপ্টারও সংযুক্ত করা হবে বলে জানান কোস্ট গার্ড কর্মকর্তা কমান্ডার এ এইচ এম শামীম। তিনি বলেন, দেশের শতকরা ৯২ ভাগ আমদানি-রফতানি সমুদ্রপথে হয়ে থাকে বিধায় গভীর সমুদ্রে কোস্ট গার্ডের বড় জাহাজ না থাকার বাস্তবতায় ইতালি হতে চারটি ওপিভি গত ২ নভেম্বর কোস্টগার্ড বাহিনীর বহরে সংযোজিত হয়েছে। অপর দুটি জাহাজ আগামী জুলাইয়ের মধ্যে কোস্ট গার্ড বাহিনীর বহরে সংযোজিত হবে। এর মাধ্যমে গভীর সমুদ্রে কোস্ট গার্ড বাহিনীর দীপ্ত পদচারণা ও দায়িত্ব পালন সম্ভব হবে।

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলে, ‘কোস্ট গার্ডের সক্ষমতা বাড়াতে ১০৩ কোটি ১৩ লাখ টাকার একটি প্রকল্প শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দুটি হারবার পেট্রোল বোট (এইচপিবি), ১০টি হাই স্পিড বোট, চারটি পল্টুন এবং কোস্ট গার্ড স্টেশন চাঁদপুরে প্রশাসনিক ভবন, সেইলর্স ব্যারাক ও সাব স্টেশান ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও ৪৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় পটুয়াখালীতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনীর একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ ঘাঁটি ‘সিজি বেইস অগ্রযাত্রা’ নির্মাণ করা হয়েছে।

গত মাসে বাহিনীর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, বর্তমান সরকার কোস্টগার্ডের সক্ষমতা বাড়াতে বদ্ধপরিকর। গত তিন বছরের ব্যবধানে এ বাহিনীর সদস্য আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার ৯৫৩ জনে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়াও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় জনবল আরও বাড়ানো হবে। এ বাহিনীর উন্নয়নে অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় কোস্ট গার্ডকে যুগোপযোগী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।

/এসটি/