চিকিৎসা সেবা আইনের খসড়া নিয়ে আরও আলোচনার দাবি

চিকিৎসা সেবা আইন ২০১৭ এর খসড়া নিয়ে গোল টেবিল বৈঠকচিকিৎসা সেবা আইন-২০১৬ নিয়ে আরও অনেক বেশি আলোচনার প্রয়োজন।কারণ এ আইনটি অসঙ্গতিপূর্ণ।খসড়া আইনে সেবা গ্রহীতার সুরক্ষার জন্য কিছু নেই। আইনটি চিকিৎসকদের স্বার্থে করা হচ্ছে।কিন্তু কোনও আইনে কারও জন্য বেশি সুযোগ, আবার কারও জন্য কম সুযোগ থাকতে পারে না।আইন হবে সবার জন্য সমান অধিকারের।

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) আয়োজিত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত ‘চিকিৎসা সেবা আইন-২০১৬’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, আইনে চিকিৎসক ও রোগী উভয়ের জন্যই সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে। কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে, এটা যেন মনে না করা হয়।

চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে সেটি অবশ্যই প্রথমে চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল)কে জানাতে হবে বলে উল্লেখ করেন সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক।একই সঙ্গে তিনি বলেন,‘আইনটি নিয়ে আরও পর্যালোচনা দরকার।কারণ,এ আইনে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে।কারও যেন কোনোভাবেই মনে না হয় যে, আইনটি চিকিৎসকদের স্বার্থে করা হয়েছে।’

খসড়া আইনে প্যাথলজি থেকে চিকিৎসকদের কমিশন গ্রহণের বিষয়টি উল্লেখ থাকায় সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী  বলেন, ‘এক সময় সব উন্নত দেশেই এই ব্যবস্থা চালু ছিল।কিন্তু পর্যায়ক্রমে তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আমাদের দেশেও এটা নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন। কারণ, সমাজে এ কারণে চিকিৎসকদের বদনাম হচ্ছে।’ তবে এর জন্য যারা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবসা করেন, তারা দায়ী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বৈঠকে দৈনিক সমকাল পত্রিকার সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘খসড়া আইনে সেবা গ্রহীতার সুরক্ষার জন্য কিছুই নেই। কেবল চিকিৎসকদের স্বার্থে এ আইন করা হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। তাছাড়া আইনে থাকা চিকিৎসকদের দায়মুক্তির বিয়ষটিও গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি খসড়া আইনে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করতে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তদন্ত প্রতিবেদন থাকতে হবে,এ বিষয়টি আদালত অবমাননার সামিল। কারণ আদালত প্রয়োজন মনে করলে স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও এটা করতে পারে। আদালতকে কোনও প্রতিবন্ধকতা দেওয়া যায় না।’ 

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের  (বিএমএ)সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, ‘এই আইনটি সামগ্রিকভাবে সরকারি চিকিৎসকদের জন্য নয়।এটি মূলত বেসরকারি চিকিৎসা ক্ষেত্রের জন্য। সরকারি চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারী আইন প্রযোজ্য হবে।’ এ বিষয়ে ভারতের আইনের উল্লেখ করে তিনি বলেন,  ‘সেখানে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে অবশ্যই প্রমাণ দেখাতে হয়।’

কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাহাত খান বলেন, ‘আইনে সবার সমান অধিকার থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কারও জন্য বেশি বা কারও জন্য কম সুযোগ দেওয়ার অবকাশ নেই। তাছাড়া, রোগী মারা গেলেই ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে না। কারণ ডাক্তাররাও মানুষ, ভুল তাদেরও হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও আইনজীবী শুধু চাকরিই করেন না, এরা দেশের মানুষের সেবাও করেন।’ 

কোন আইন কতটা ভাল বা মন্দ তা বোঝা যায় প্রয়োগের ক্ষেত্রে। এখানে কতগুলো আইনের উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলোর ধারা না  হওয়া পর্যন্ত এর প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হবে না বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ  আইনজীবী বাসেত মজুমদার। তিনি বলেন, ‘সব কিছু আদালতের অধীনে না এনে চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রক সংস্থার অধীনে কিছু ক্ষমতা থাকা উচিত। যেমনটা বার কাউন্সিল বা প্রেস কাউন্সিলে রয়েছে। তাছাড়া আইনে কোনটা আমলযোগ্য কোনটা আমল অযোগ্য সেটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন।’ এমনকি চিকিৎসকদের মতো  রোগীদেরও যদি সংগঠন থাকতো, আরও ভালও হতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বাবু বলেন,‘সবাই স্বার্থে জড়িয়ে পড়ছে।এই কারণেই রোগী, চিকিৎসক, আইনজীবী, সাংবাদিকদের স্বার্থে আইন প্রণয়ন করতে হচ্ছে।’ কিন্তু রোগী ও চিকিৎসকের সম্পর্ক কোনও আইন দিয়ে নিরুপণ করা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, বিসিপিএস এর সাবেক প্রেসিডেন্ট  অধ্যাপক ডা. গোলাম কিবরিয়া, অধ্যাপক ডা. সানোয়ার হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ডা. জুলফিকার  আলী লেলিন, হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি  তৌফিক মারুফ প্রমুখ।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলানের সভাপতিত্বে বৈঠকে লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ।

/জেএ/এপিএইচ/

আরও পড়ুন: 

বাংলাদেশে কয়েকটি মৌলবাদী দলের উদ্ভব হয়েছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী