শিশু-কিশোরদের কাছে বাবার স্মৃতিচারণ করলেন শেখ রেহানা

শিশুদের সঙ্গে জাতির পিতার স্মৃতি চারণ করছেন কন্যা শেখ রেহানাশিশু-কিশোরদের কাছে পিতার স্মৃতিচারণ করলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা। পিতার ৯৮তম জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফর্মেশন (সিআরআই) আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে রেহানা তার জীবনে বাবার সঙ্গে যেসব স্মৃতি রয়েছে, তার উল্লেখযোগ্য কিছু তুলে ধরেন। এ সময় তিনি উৎসুক শিশু-কিশোরদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন।
শিশুদের কাছে বঙ্গবন্ধুর শৈশবকাল, রাজনৈতিক জীবন, সংগ্রামের কথা তুলে ধরার লক্ষ্যেই সিআরআই ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ সময় রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকও তার সঙ্গে ছিলেন।
অনুষ্ঠানে শেখ রেহানা শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি যখন তোমাদের মতো ছোট ছিলাম, আমার বাবা বেশির ভাগ সময় জেলেই থাকতেন। সেজন্য বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। বেশির ভাগ একাই যেতাম। না হয় মা নিয়ে যেতেন। বাবা বাসায় থাকলে তার সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার বায়না ধরতাম। তবে তিনি স্কুলে নিয়ে না গেলেও অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসতেন। এসময় ঈদের আনন্দের মতো আমার আনন্দ হতো।’

ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়িতে পিতাকে জড়িয়ে বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আমার বয়স যথন তিন কি চার, তখন আমরা এই বাড়িতে উঠি। বাড়ির উঠোনে বাস্কেটবল খেলতাম। বাবা কারামুক্ত থাকলে বাসায় থাকতেন। আর তখন পরিবারের সবাই মিলে ব্যাডমিন্টন খেলতাম। বাসার বাগান আর বারান্দা বিভিন্ন রকমের ফুলে ভরে থাকতো। স্কুলে যাওয়ার আগে ফুল কুড়িয়ে মালা বানাতাম ।’

বাবা কেমন শাসন করতেন, ছোট্ট এক শিশুর এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ রেহানা বলেন, ‘মারধর তো দূরের কথা, বাবা কখনও বকাও দিতেন না। শুধু এমনভাবে তাকাতেন আমরা বুঝে ফেলতাম যে, কোনও ভুল করে ফেলেছি। বঙ্গবন্ধু শিশুদের অনেক ভালোবাসতেন।’ তিনি বলেন, ‘বাবার চাইতে মা বেশি শাসন করতেন।’

বঙ্গবন্ধুর দৈনন্দিন রুটিন তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাবা সকালে পুরো ধানমণ্ডিতে হাঁটতেন,আমি আর আমার ভাইয়েরা শুধু ৩২ নম্বরেই তাঁর সঙ্গে হাঁটতাম। কিন্তু বোঝাতাম আমরাও পুরোটা হেঁটেছি। ওনাকে তো আমরা সবসময় কাছে পেতাম না। তাই যখনই তিনি বাসায় থাকতেন, সবাই তার সঙ্গে খেলতাম। তাঁর কাছে কারাগারের গল্প শুনতাম। তাঁর হাতে ভাত খেতাম।’

তিনি বলেন, ‘বাবা যখনই বাসায় আসতেন, যত রাতই হোক, তিনি নিজের হাতে আমাকে খাইয়ে দিতেন। ছোটবেলায় আমি খেতে চাইতাম না। ঘুমের ভান করে পড়ে থাকতাম। কিন্তু বাবা সবসময় বুঝতে পারতেন যে, আমি ঘুমের ভান করছি।’

শেখ রেহানা জানান, তাদের পড়াশোনায় বঙ্গবন্ধুর কড়া নজর ছিল। সবার পড়ালেখার খোঁজখবর রাখতেন তিনি।যখনই সুযোগ পেতেন,ছেলে-মেয়েদের বাংলা-ইংরেজি লেখার দক্ষতা, অংকের দক্ষতার পরীক্ষা নিতেন।তখন শেখ রেহানা ও তার ভাই-বোনেরা খুব ভয়ে থাকতেন।
বাবাকে নিয়ে একবার ঈদের বাজার করার স্মৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে অন্যান্য বাচ্চারা যখন বাবার সঙ্গে মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটার গল্প করতো, তখন আমার অনেক মন খারাপ হতো। একবার ঈদের সময় বাবা বাড়িতে ছিলেন, তখন তাঁকে আমি জোর করে নিউমার্কেটে নিয়ে যাই।এখনকার মতো শপিং মল তখন ছিল না।নিউমার্কেটই ছিল কেনাকাটার সবচেয়ে বড় জায়গা।বাবা সেদিন নিউমার্কেটে নিয়ে গিয়ে আমাকে একটি জামা ও আইসক্রিম কিনে দেন। সেদিন সন্ধ্যায় আমরা সব ভাইবোন খুশিতে আত্মহারা ছিলাম।’
বঙ্গবন্ধুর মতো মহান ব্যক্তিত্বকে জানতে শিশুদের উপদেশ দেন শেখ  রেহানা। এতে তারা কিভাবে অন্যের উপকার করতে হয়। কিভাবে মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।কিভাবে অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে হয়, তা জানতে পারবে বলেও জানান তিনি। শেখ রেহানা আশা প্রকাশ করেন যে, শিশুরা তাদের বাবা-মা ওবন্ধুদের সাহায্য করবে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শিশু-কিশোরদের জিজ্ঞেস করেন, তারা জাতির জনকের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ শুনেছে কিনা। তখন সবাই শেখ রেহানাকে উত্তর দিয়ে তার সঙ্গে উচ্চারণ করে, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

বঙ্গবন্ধু কোথায় জন্মেছিলেন, তাঁর বাবা-মায়ের নাম কী, শেখ রেহানা আড্ডায় আগত শিশু-কিশোরদের এ প্রশ্নগুলোও করেন। প্রতিটি প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর দেয় শিশু-কিশোররা।

/ইএইচএস/ এপিএইচ/

আরও পড়ুন: 
জেলখানায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের ডায়েরি