তারা মনে করছেন, জঙ্গিবাদ নির্মূলে আরও বেশি সচেতন ও কৌশলী না হলে আত্মঘাতী হামলা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে জঙ্গিদের আত্মঘাতী হামলার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। রাজধানীতে এরইমধ্যে পুলিশ ও র্যাবের ব্যাপক তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ধারাবাহিক অভিযানে জঙ্গিদের কোণঠাসা করে ফেলার কারণেই তারা বিচ্ছিন্নভাবে হামলা করার চেষ্টা করছে। তবে কোথাও তারা সফল হতে পারছে না। তার আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে যাচ্ছে। ধরা পড়ার আগে কেউ কেউ আত্মঘাতী হামলার চেষ্টা করছে।’
জঙ্গি প্রতিরোধে অভিজ্ঞ ডিআইজি পদমর্যাদার এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘জঙ্গিদের এখন আগের মতো শক্তি-সামর্থ্য কোনোটাই নেই। তাদের শীর্ষ নেতারা ধরা পড়েছে অথবা নিহত হয়েছে। অল্প কয়েকজন যারা বাইরে রয়েছে, তারা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। জঙ্গিদের একেবারে নির্মূল করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা চলছে।’
জঙ্গিবিষয়ক গবেষক, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অতীতে আমরা আত্মঘাতী প্রবণতা লক্ষ করেছি। তবে, এবার জঙ্গিরা সরাসরি আত্মঘাতী হামলায় যাচ্ছে। আগে তারা অভিযোনের মুখে পড়লে অথবা আটক হওয়ার আশঙ্কায় পড়লে আত্মঘাতী হওয়ার দুই-একটি নজির আছে। কিন্তু সম্প্রতি তারা আত্মঘাতী হিসেবেই হামলার পরিকল্পনা করছে। এর দু’টি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, তারা শক্তি কম ক্ষয় করতে চাইছে। দ্বিতীয়ত, তারা আটক হলে তথ্য ফাঁস যেন না হয়, সেখানেই আত্মঘাতী হচ্ছে। এটি একটি ভয়ঙ্কর প্রবণতা। সুসাইড গ্রুপের ধ্বংসাত্মক বা আক্রমণের ক্ষমতা অনেক বেশি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জঙ্গিদের কোণঠাসা করার কথা বলা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি কুমিল্লার চান্দিনায় দুই যুবককে হাতে তৈরি গ্রেনেডসহ গ্রেফতারের পর জঙ্গিদের নতুন করে সংগঠিত হওয়ার বিষয়টি আবারও সামনে চলে এসেছে। গ্রেফতার হওয়া দুই জঙ্গির কাছ থেকে এবং তাদের দেওয়া তথ্যমতে চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে যেসব হাতে তৈরি গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়, তা আগের যেকোনও গ্রেনেডের চেয়ে আকারে বড়। এছাড়া গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর আশকোনার সূর্যভিলা নামে এক বাসায় অভিযান চালানোর পর একাধিক বিস্ফোরক ভেস্ট উদ্ধার করে সিটিটিসি। এই ভেস্ট পরে এক নারীও আত্মঘাতী হয়। গত ১৫ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের আমিরাবাদ এলাকার ‘সাধনকুটির’ নামে বাসা থেকে যে জঙ্গি দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়, তাদের কাছেও আত্মঘাতী ভেস্ট ছিল। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পাশের প্রেমতলায় অভিযানের সময় অন্তত দুই জঙ্গি আত্মঘাতী হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। তারা সোয়াত বাহিনীর ওপর আত্মঘাতী হামলা চালানোর চেষ্টাও করেছিল।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে জঙ্গিদের সুইসাইডাল বা আত্মঘাতী যেসব ভেস্ট উদ্ধার করা হয়েছে, সেগুলো হাতে তৈরি। একটি ভেস্টে পাঁচটি করে হাতে তৈরি গ্রেনেড রেখে একযোগে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। জঙ্গিদের মধ্যে আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা বাড়াটা উদ্বেগজনক। আশকোনায় র্যাবের নির্মাণাধীন সদর দফতরের নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে আত্মঘাতী হামলাকারীর ভেতরে ঢুকে পড়া আরও বেশি ভাবিয়ে তুলেছে নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টদের।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গিদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়ে তাদের দমন ও অস্ত্র-বিস্ফোরক আনার পথগুলো বন্ধ করতে পারলে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা ঠেকানো সম্ভব হবে। এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে জঙ্গিবাদ দমনে পাল্টা মতাদর্শ প্রচার ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি জোরদার করাও প্রয়োজন।
এএআর/এমএনএইচ/
আরও পড়ুন:
‘র্যাবের মনোবল ধ্বংস করার হীন উদ্দেশ্যে আত্মঘাতী সন্ত্রাসী হামলা’
র্যাবের হাতে গ্রেফতার আবু হানিফের লাশ ২৪ ঘণ্টা পর ঢামেক মর্গে!
দেশে জঙ্গি নির্মূল হয়নি, তবে নিয়ন্ত্রণ করা গেছে: আইজিপি