সরেজমিনে দেখা গেছে, হরিণধরা গ্রামে নির্মিত সাভার চামড়া শিল্পনগরীর কয়েকটি কারখানা উৎপাদন (ব্লু ওয়েট) শুরু করেছে। এসব কারখানার পরিত্যক্ত বর্জ্য শিল্পনগরীর একটি নির্দিষ্ট স্থানে খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে। এসব বর্জ্য থেকেই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এখনই এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের কোনও উপায় নেই বলেই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেখা গেছে, ট্যানারি পল্লীর উত্তর ও দক্ষিণ পাশের সীমানা ঘেঁষে ফেলা হচ্ছে কঠিন বর্জ্য। একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে ট্যানারি পল্লীর ডাম্পিং স্টেশন তৈরির জন্য পাঁচ বিঘা খোলা জায়গা রাখা হয়েছে। কিন্তু এখনও সেখানে ডাম্পিং স্টেশন তৈরি হয়নি। সেটির চেহারা দাঁড়িয়েছে পুকুরের মতো। ট্যানারির বর্জ্যে পুকুর অনেকটাই ভরে গেছে। চামড়ার পরিত্যক্ত কঠিন বর্জ্য এবং ঝিল্লির অংশ গড়িয়ে পড়ছে পুকুরের পানিতে। অবশ্য সেটাকে পানি না বলাই ভালো। বর্জ্য মিশ্রিত পানি পরিণত হয়েছে ঘন তরল ময়লায়, যা থেকে ছড়াচ্ছে বীভৎস গন্ধ।
একটি ট্যানারি কারখানার ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, ট্রাক থেকে লবণ মিশ্রিত কাঁচা চামড়া নামিয়ে ড্রামে তোলা হচ্ছে। ড্রামে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ শেষে কঠিন ও তরল বর্জ্য আলাদা করা হচ্ছে। ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় কারখানার কঠিন বর্জ্য ও ঝিল্লি ফেলা হচ্ছে পুকুরের চেহারার ওই খোলা জায়গায়। আর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) পুরোপুরি চালু না হওয়ায় তরল বর্জ্য বা ক্রোম পানি ফেলা হচ্ছে ধলেশ্বরী নদীতে।
সিইটিপির পশ্চিম পাশের দেয়াল ঘেঁষে ধলেশ্বরী নদী। ভাঙনের হাত থেকে ট্যানারি রক্ষার জন্য নদীর পারে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাঁধের ভেতর দিয়ে মোটা পাইপে করে ট্যানারির বিষাক্ত পানি ফেলা হচ্ছে নদীতে। ফলে নদীর মাছ মরে ভেসে উঠছে।
সাভার চামড়া শিল্পনগরীর প্রকল্প পরিচালক আবদুল কাইয়ুম জানান, সরকারি অংশের কাজের মধ্যে সবচেয়ে বড় সিইটিপি নির্মাণের কাজ ৮০ শতাংশ হয়েছে। তবে ডাম্পিং ইয়ার্ডসহ কিছু কাজ এখনও বাকি রয়েছে। সেগুলো দ্রুত শেষ করা হবে।
চামড়া শিল্পনগরীর দক্ষিণ প্রান্তে রয়েছে জমজম সিটি নামে একটি আবাসিক প্রকল্প। এ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে জমজম সিটি মাদ্রাসা, মসজিদ এবং গ্রাম। জমজম সিটির সীমানা প্রাচীর ঘেঁষেই সেই ডাম্পিং স্টেশন, যেটি এখন দেখতে অনেকটা পুকুরের মতো। ডাম্পিং স্টেশনের কারণে ভীষণ বিপদে পড়েছেন জমজম সিটি মাদ্রাসার শতাধিক ছাত্র এবং মসজিদের মুসল্লিরা। বর্জ্যের দুর্গন্ধে তাদের পক্ষে চলাফেরা করাই মুশকিল।
এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর সভাপতি আবু নাসের খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরানোর মূল কারণ ছিল ওই এলাকার পরিবেশ রক্ষা করা। কিন্তু সাভারে ট্যানারি সরিয়েও পরিবেশের জন্য লাভ হয়নি। হাজারীবাগের মতো সাভারের পরিবেশও দূষিত হয়ে মানুষকে অতিষ্ট করে তুলেছে। এর প্রভাবে সেখানকার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তারা এখন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে আছেন।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম।
/এসআই/এএআর/আপ-এসএনএইচ/