গত ১৭ মার্চ রাজদানীর আশোকনায় র্যাবের নির্মাণাধীন সদর দফতরে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘায় এক জঙ্গি। এর এক সপ্তাহ পর শুক্রবার রাত পৌনে ৮টার দিকে বিমানবন্দর গোলচত্বরেই আবার ‘আত্মঘাতী’ বিস্ফোরণ ঘটালো তারা। যদিও পুলিশ এ হামলাকে আত্মঘাতী না বলে বোমা বহনের সময় ‘বিস্ফোরণ’ বলে দাবি করছে।
এদিকে, বিমানবন্দর গোলচত্বরের পাশে পুলিশ বক্সের সামনে আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পর রাজধানীসহ সারা দেশে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন, বিদেশী নাগরিকদের অফিস ও বাসস্থান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন কার্যালয়ে নিয়োজিতদের সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে।
এ ঘটনার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ‘পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। কেপিআইসহ সব ধরনের স্থাপনা নিরাপদ রাখতে পুলিশ নজরদারি করছে।’
সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একাধিক কর্মকর্তার। তারা জানিয়েছেন, নব্য জেএমবির অধিকাংশ শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার ও অভিযানে পরাস্থ করা হয়েছে। তাই বাইরে থাকা সংগঠনটির গুটিকয়েক নেতা আবারও সংগঠিত হতে বিভাগীয় শহরগুলোতে আস্তানা গেড়েছে। রাজধানী ঢাকাতেও তাদের দু-একটি আস্তানা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি বিভিন্ন সময় ২৫ থেকে ৩০ জন যুবক জঙ্গিবাদে উদ্ভুদ্ধ হয়ে ঘর ছাড়ে। তারাই মূলত নতুন করে সংগঠিত হয়ে হামলার চেষ্টা করছে। যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে মাঈনুল ইসলাম ওরফে মুসা নামে এক ব্যক্তি। আশকোনাতেই গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর তার আস্তানায় অভিযান চালালেও তাকে ধরা যায়নি। মূসার সঙ্গে হাদীসুর রহমান সাগর নামে বোমা তৈরিতে দক্ষ এক ব্যক্তি, সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, রাশেদ ওরফে র্যাশসহ আরও কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গি এখনও আত্মগোপনে রয়েছে।
এদিকে র্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ১৭ মার্চ র্যাব ক্যাম্পে যে যুবক আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় তার নাম-পরিচয় এখনও জানা যায়নি। নিহত জঙ্গির হাতের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ভান্ডারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছিল। সেখানে ৬ শতাংশ মিলের কারণে জুয়েল রানা নামে এক যুবকের পরিচয় পাওয়া গেলেও সেই যুবক জীবিত রয়েছে বলে জানা গেছে। এখন নিখোঁজ তরুণের পরিবারের সঙ্গে ডিএনএ নমুনা মিলিয়ে তার পরিচয় উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
নাম-পরিচয় না পাওয়া গেলেও র্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা হামলার ধরণ ও অন্যান্য গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয়েছে এটি কথিত নব্য জেএমবি বা সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সদস্যদের হামলা ছিল।
এদিকে শুক্রবার বিমানবন্দর গোল চত্বরে বিস্ফোরণে নিহত যুবক মিরপুর থেকে নিখোঁজ আয়াদ হাসান বলে ধারণা করছেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। আয়াদের ছবির সঙ্গে নিহত যুবকের চেহেরার মিল রয়েছে জানিয়ে, আঙ্গুলের ছাপ ও ডিএনএ নমুনা মিলিয়ে দেখার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
/এসএনএইচ/