জঙ্গিরা ভ্রাম্যমাণ, হিমশিম খাচ্ছেন গোয়েন্দারা

জঙ্গি

নিয়মিত ব্লকরেড, অভিযান, গোয়েন্দা তৎপরতার কারণে রাজধানীতে আস্তানা গাড়তে না পেরে জঙ্গিরা দেশের জেলা ও বিভাগীয় শহরে অবস্থান করছে। ঢাকার বাইরের ওইসব এলাকায় বসে হামলা ও নাশকতার পরিকল্পনা করে তারা বিস্ফোরক নিয়ে মহানগরীতে প্রবেশ করছে। মাত্র আটদিনের ব্যবধানে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় দুটি আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পর এমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

শুক্রবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে দুটি পুলিশ বক্সের মাঝখানে ‘আত্মঘাতী’ বিস্ফোরণে এক জঙ্গি নিহত হয়। এর আগে ১৭ মার্চ একই এলাকার র‌্যাবের নির্মাণাধীন সদর দফতরে আত্মঘাতী হামলায় এক জঙ্গি নিহত হয়। এতে দুজন র‌্যাব সদস্য গুরুতর আহত হয়। দুটি ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে।

শুক্রবারের বিস্ফোরণের পর কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের একাধিক কর্মকর্তারা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নিহত জঙ্গি বিস্ফোরক নিয়ে কোথাও যাচ্ছিল। নতুন কোনও স্পটে হয়তো হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে সে রাজধানীতে প্রবেশ করেছিল। তবে তার অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের কারণে সেটি আগেই বিস্ফোরিত হয়ে যায়। তার পোশাক আশাক ছিল সন্দেহের উর্ধ্বে। 

কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকায় পুলিশের নজরদারি থাকায় জঙ্গিরা তাদের নিরাপদ এলাকায় আস্তানা তৈরি করে তারা রাজধানীতে আত্মঘাতী হামলার দিকে ঝুকছে। এ ধরনের হামলা প্রতিরোধ করা কঠিন।

তবে শুক্রবারের ঘটনার পর ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘ঢাকা নিরাপদ। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যাযা করা দরকার আমরা করবো।’ পুলিশ বক্সের ওই বিস্ফোরণের ঘটনাকে তিনি হামলা বলতেও রাজি নন।

এদিকে, শুক্রবারের ওই আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পর মৃতদেহের পাশ থেকে একটি ট্রাভেল ব্যাগ উদ্ধার করে পুলিশ। তার ভেতর থেকে নূন্যতম ২০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও মৃতদেহের পাশ থেকে আরও একটি বোমা উদ্ধার করে।

পুলিশ জানিয়েছে, এসব বিস্ফোরক খুবই শক্তিশারী। কোনও জনবহুল এলাকায় এগুলো বিস্ফোরণ করাতে পারলে অনেক মানুষের প্রাণহানি হতো।

সিটিটিসি ইউনিটের বোম ডিসপোজাল টিমের প্রধান ছানোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আত্মঘাতী যুবক যে বিস্ফোরক বহন করছিলো, তা খুবই শক্তিশলী। সেগুলো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সে মূলতো বিস্ফোরক নিয়ে কোথাও যাচ্ছিল কোথাও। এখানে পুলিশ চেকপোস্ট দেখে অতিরিক্ত সতর্ক হয়েছিল। তখন হয়তো বিস্ফোরণ হয়েছে।’

এমন ‘হামলার’ আরও আশঙ্কা করেছেন গোয়েন্দারা। তবে রাজধানীতে তাদের কোনও শক্ত ঘাটি নেই। সম্প্রতি চট্টগ্রাম ও সিলেটে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও দাবি করছে, যেখানে তুলনামূলক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কম, সেখানে আস্তানা তৈরি করছে জঙ্গিরা।  সেসব আস্তানায় বিস্ফোরণ মজুত করে পরিকল্পনা মাফিক ভ্রাম্যমাণ হামলা চালানোর চেষ্টা করছে। হামলাকারীদের একটি অংশ আত্মঘাতী। তাদের দিয়ে বড় নাশকতার চেষ্টা চলছে, ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের হামলা হতে পারে। 

গোয়েন্দা কর্মকর্তরা বলেন, জঙ্গিদের মূল টার্গেট রাজধানীতে নাশকতার। তারা সেই টার্গেটে কাজ করছে।

তবে মহানগরবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেন, ‘নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য সবকিছুই করা হবে। যারা স্বাধীনতা বিরোধী তারাই দেশে জঙ্গিবাদ ছড়াচ্ছে। এদের কঠোর হস্তে মোকাবিলা করা হবে।’

সিলেটের শিববাড়িতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর নগীরর কোনও বাসা সন্দেহভাজন মনে হলে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, জঙ্গিরা দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে ঘাঁটি গেড়েছে।

/এসটি/

আরও পড়ুন: আতিয়া মহলে কি শীর্ষ জঙ্গি নেতা মুসা আছে?