ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে করা পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান ও উপ-পরিচালক সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাতে ১৩ তলায় আগুন। অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখছে বিষয়টি। শর্ট সার্কিটও হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘লোকজনতো অনেক ধরনের ধারণা করে। যেকোনও আগুনেই মানুষ নানা কথা বলে। বাস্তবতা হচ্ছে অন্য জিনিস। ওখানে যখন আমরা তদন্ত শুরু করেছি তখন আস্তে আস্তে সবকিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে। সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করলে আমরা বুঝতে পারবো ওখানে কোনও লোকজন গেছেন কিনা। ওখানে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন সবার জবানবন্দি নেবো।’ বাংলাদেশ ব্যাংকে এর আগে কখনও আগুন লেগেছে কিনা জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মাঝে-মধ্যে ছোটখাট হলে সেগুলো তারা ইস্টিংগুইশার দিয়ে নিভিয়ে ফেলে।’
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আগুনটা পেছনে লেগেছে। তখন বাইরে থেকে লোকজন দেখে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে তারা আগুন নেভাতে যান।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের ফায়ার এলার্ম সিস্টেম ঠিক ছিল না। মাঝে মাঝে ফলস অ্যালার্মও দেয়। ওরা আগুন লাগার কিছুক্ষণ পরে এলার্ম দিয়েছে। যেটা আমরা কন্ট্রোল রুম থেকে যোগাযোগ করার পর জানতে পারি।’
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক হচ্ছে কেপিআই। কিছু জায়গা আছে যেখানে আগুন লাগতে পারে না। তাহলে সেটা আর কেপিআই থাকলো না ‘ তিনি বলেন, ‘এখন তদন্ত কমিটির মূল কাজ হচ্ছে আগুনের মোটিভটা বের করা। কী কারণে আগুন লেগেছে, কী জিনিসপত্র পুড়েছে, কী ধরনের ফাইলপত্র পুড়েছে তাহলে বোঝা যাবে তারা স্যাবোটাজ করল কিনা। তবে এটা হওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।’
আবু নাঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আমার জানা মতে এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে, প্রত্যেক বছরই ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে কেপিআই’র লোকদের ফায়ার ফাইটিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারপর কেপিআই হিসেবে ওদের নিজস্ব ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমও আছে। ছয় মাস পর পর একবার করে প্র্যাকটিস করার জন্য আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে যে প্যাকটিস করতে হবে। ফায়ার সার্ভিসকে পৌঁছাতে যে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে সেই পর্যন্ত কারা আগুনের সঙ্গে ফাইট করবে। তারা নিজেরা করবে।এ সক্ষমতা তাদের দেওয়া হয়েছে। কেপিআই হিসেবে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কোটি কোটি টাকার ফায়ার ইকুইপমেন্ট দেওয়া হয়েছে। এগুলো কেন তারা কাজে লাগাতে পারল না। ওখানে ফায়ার সেফটি সেল আছে। ওই সেলে একজন অফিসার আছেন। তারা কী করলেন।’
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘অবশ্যই এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা আছে। তারা ব্যর্থ হবে। আর প্রত্যেকবারই তারা পার পেয়ে যাবে, এটা হতে পারে না। এর জবাবদিহিতা তাদের করতেই হবে এবং এটা সরকারের জন্য একটা বিব্রতকর অবস্থা। কারণ কেপিআইয়ে আগুন লেগে যাবে এটা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো জায়গায় একের পর এক ঘটনা ঘটবে এটা হতে পারে না। এমনিতেই মানুষের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিষয়ে একটা বিরূপ মনোভাব আছে। এরমধ্যে আবার এমন ঘটনা অত্যন্ত গর্হিত কাজ হয়েছে। সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে হলে এর প্রকৃত তদন্ত হওয়া উচিত। প্রকাশ্যে তদন্ত হওয়া উচিত। দায়ীদের কী শাস্তি হলো সেটাও জনগণের সামনে তুলে ধরা উচিত। না হয় সব কেপিআই অনিরাপদ হয়ে যাবে। সবখানেই তাহলে আগুন লেগে যেতে পারে।
/জেইউ/এপিএইচ/
আরও পড়ুন: