‘আগের দিনে মানুষ নতুন বছরের প্রথম দিনে নিজ ক্ষমতা অনুযায়ী ভালো কিছু খাওয়ার চেষ্টা করতো, পান্তা খাওয়ার কথা চিন্তাও করেনি তারা। হঠাৎ করেই বিচ্ছিন্ন, অবিবেচক মধ্যবিত্ত শ্রেণির কিছু মানুষ এই ফ্যাশন জারি করলো, এটা দূর হওয়া উচিৎ, এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হওয়া উচিৎ’, বলে মন্তব্য করেছেন দেশের গবেষক, চিন্তাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।
জানা যায়, ১৯৮৩ সালের কয়েকজন সাংস্কৃতিক কর্মী আড্ডা দিতে দিতে রমনা বটমূলে বৈশাখী আয়োজনের প্রস্তাব করেন। পরে বিষয়টিকে অন্যরা সমর্থন জানালে সেবছর থেকেই রমনা বটমূলে পান্তা-ইলিশ খাওয়া শুরু হয়। তবে নব্বই দশকের পর থেকেই ইলিশ-পান্তার ব্যাপকতা বেড়েছে।
এদিকে, ইলিশ প্রজনন মৌসুমকে প্রাধান্য দিয়ে এবছরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে পহেলা বৈশাখে ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গতবছর থেকেই ‘বৈশাখে ইলিশ নয়’ উচ্চারিত হচ্ছে জোরালোভাবে।
অধ্যাপক যতীন সরকার পান্তা ইলিশ খাওয়াকে দেশের দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষদের অবজ্ঞা করার নজির বলে দাবি করেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘বৈশাখের সংস্কৃতি সমগ্র বাঙালি এবং দেশের অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর জন্য আনন্দের। নতুন বছরে পুরাতন সবকিছুকে ভুলে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করার ক্ষণ, নতুন কিছু তৈরি করা। কিন্তু ধীরে ধীরে সেখানে আরও অনেক কিছু যোগ হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে পান্তা ইলিশ অধ্যায়, তবে সেটি একেবারেই বাঙালি সংস্কৃতিকে প্রতিনিধিত্ব করে না।’
বাংলা একাডেমির পরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘বৈশাখের সঙ্গে ইলিশের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং সামর্থ্য অনুযায়ী খাবারের পাশাপাশি কাঁচামরিচ, পেঁয়াজসহ নানারকম ভর্তা দিয়ে আগের রাতের পানি দেওয়া ভাত খাওয়ার রীতি ছিল।’
বাংলা একাডেমির সহপরিচালক ও লোক গবেষক ড. সাইমন জাকারিয়াও বাঙালির পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সঙ্গে ইলিশ বা কোনও মাছের কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি, বাঙালির খাদ্যাভাস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, সারা বাংলাদেশের কোনও গ্রামেই চৈত্র সংক্রান্তি বা পহেলা বৈশাখের দিন মাছ খাওয়ার কোনও বিধান নেই। চৈত্র সংক্রান্তির দিনে করল্লা বা নিমপাতা অর্থ্যাৎ যে কোনও তেতো জাতীয় খাবার খাওয়া হয়ে থাকে। আর বছর শুরুর দিনে টক জাতীয় যে কোনও খাবার যেমন আম ডাল, তেঁতুল বা বরই এর আচার দিয়ে তারা রান্না করে নানা তরকারি।’
/এমও/