যাত্রী ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য প্রতিরোধে রবিবার (১৬ এপ্রিল) থেকে বুধবার (১৯ এপ্রিল) পর্যন্ত প্রতিদিন রাজধানীজুড়ে বিআরটিএ’র পাঁচটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত তৎপর ছিল। এসময় প্রতিটি বাসই সিটিং সার্ভিস বাদ দিয়ে লোকাল সার্ভিস পরিচালনা করে। কিন্তু আদালতকে ফাঁকি দিয়ে আগের মতোই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় চলতে থাকে বাসগুলোয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয়ে বহু মালিক এসময় তাদের ফিটনেসবিহীন ও লক্কড়-ঝক্কড় বাসগুলো বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখে। ফলে নগরীতে পরিবহন সংকটের পাশাপাশি নৈরাজ্য দেখা দেয়।
এ অবস্থায় বুধবার বিকালে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে জরুরি সভা করে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান পরবর্তী ১৫ দিনের জন্য সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে চলমান বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন।
বিকালে বাহন পরিবহনের একটি বাসে ভ্রমণকালে বাসটির কনডাক্টর বিআরটিএ’র চার্ট উপেক্ষা করে ভাড়া আদায় করছিলেন। এ নিয়ে কনডাক্টরের সঙ্গে যাত্রীদের কথা কাটাকাটি হয়। বাসটির যাত্রী এ প্রতিবেদকও ভাড়ার তালিকা দেখতে চান। কনডাক্টর তখন বলেন, ‘চার্ট লাগাই খালি ম্যাজিস্ট্রেটের লাইগা। ম্যাজিস্ট্রেট চার্ট দেখতে চান, যাত্রীরা চার্ট দেখে না। যাত্রীরা চার্ট না দেইখাই ঝগড়া করে।’ শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া নেওয়া হয় কিনা জানতে চাইলে কনডাক্টর বলেন, ‘আজ থেইকা কোনও হাফ ভাড়া নাই।’
দেখা গেছে, পঞ্চাশ আসনের বাহন পরিবহনে সর্বনিম্ন ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগের দূরত্ব তিন কিলোমিটারেরও কম। কিন্তু এই পথের জন্য যাত্রীদের ১০ টাকা গুণতে হচ্ছে। অথচ বিআরটিএ’র চার্ট অনুযায়ী বাসটির সর্বনিম্ন ভাড়া (৩ কিলোমিটার পর্যন্ত) হওয়ার কথা ৭ টাকা। কনডাক্টর বিআরটিএ’র এই হিসাব মানতে নারাজ।
এদিকে, বৃহস্পতিবার আবারও সিটিং সার্ভিসে পরিণত হয়েছে যাত্রাবাড়ী-গাবতলী রুটে চলাচলকারী ৮ নম্বর রুটের বাসও। সকালে যাত্রাবাড়ী থেকে ৮ নম্বর বাসগুলোকে শুধু ফার্মগেট ও গাবতলীর যাত্রী তুলতে দেখা যায়। মতিঝিল, পল্টন বা শাহবাগের লোকাল যাত্রী তোলা হয়নি। তবে এসব স্টপেজের কেউ উঠলে ফার্মগেটের ভাড়া ১৫ টাকা দিতে হবে বলে ঘোষণা দেন কনডাক্টর।
বিআরটিএ’র পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) নাজমুল আহসান মজুমদার বৃহস্পতিবার বিকালে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজও (বৃহস্পতিবার) বিআরটিএ’র পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালত মিরপুর-১৩, কাফরুল, উত্তরা, পোস্তগোলা ও কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া মোড়ে সক্রিয় ছিল। এসময় তারা ট্রাকের অবৈধ বাম্পার ও অ্যাঙ্গেল খুলে দেন। কয়েকটি বাসের কাগজপত্রও পরীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া, বিআরটিএ’র মিরপুর কার্যালয় থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত আটক করেছেন পাঁচ দালালকে। সারাদিনে মামলা হয়েছে ১৭টি, জরিমানা আদায় হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাসের বিরুদ্ধে আজ সিরিয়াস অভিযান হয়নি। এ ধরনের অভিযান ১৫ দিনের জন্য স্থগিত রয়েছে।’
ছবি: নাসিরুল ইসলাম
আরও পড়ুন-
সিটিং সার্ভিস চলবে
/টিআর/