ভরা গ্রীষ্মেই অকাল বন্যা আর পাহাড়ি ঢলের কারণে পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে ওই অঞ্চলের বোরো আবাদের প্রায় ৮৬ শতাংশ ধান। তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সহায়তা করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
আজ রবিবার (২৩ এপ্রিল) পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন পানিসম্পদমন্ত্রী ও ত্রাণমন্ত্রী। এছাড়া, হাওরের পানিতে তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষার পর জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় পরীক্ষার ফলাফলের তথ্য জানান আণবিক শক্তি কমিশনের প্রতিনিধি।
পানিতে ফলস তলিয়ে যাওয়া বা হাওরের মাছ ও অন্যান্য জলজপ্রাণী মরে যাওয়ার কারণ হিসেবে রবিবার (২৩ এপ্রিল) সচিবালয়ে নিজ দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, ‘এ বছর জলবায়ুর প্রভাবে হাওর অঞ্চলে পানির ওভারফ্লো হয়েছে। এক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছুই করার ছিল না।’
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘এ বছর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দেড় ফুট উঁচু দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে বাঁধের উচ্চতা ৫/৬ ফুট। এ বছর বাঁধ নির্মাণে কোনও অনিয়ম হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ জন্য দুইটি তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে।’
এদিকে, বাংলা ট্রিবিউনের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রবিবার আণবিক শক্তি কমিশনের বিশেষজ্ঞরা তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা করেছেন সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরে। এসময় তারা জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে নেমে আসা পানি হাওরের সঙ্গে মিশলেও তাতে ইউরেনিয়াম বা অন্য কোনও তেজস্ক্রিয় পদার্থের অস্বাভাবিক উপস্থিতি ধরা পড়েনি।
আণবিক শক্তি কমিশনের বিশেষজ্ঞ ড. দিলিপ কুমার সাহা বলেন, ‘নমুনাগুলো তারা পরীক্ষা করেছেন। পরীক্ষায় হাওরে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা দেশের অন্য অঞ্চলের নমুনার চেয়ে বরং কম। কাজেই পানিতে বাইরের কোনও দূষণ মিশে যায়নি।’
এদিকে, রবিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের নিজ দফতরে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘এবার দেশের হাওরাঞ্চলে ভরা গ্রীষ্মেই বন্যা দেখা দেওয়ায় বোরো আবাদের ৮৬ শতাংশ ধানই নষ্ট হয়ে গেছে। ছয়টি জেলা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনা জেলার বোরো ধানের ওপর নির্ভরশীল কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়েছেন।’
বন্যকবলিত এলাকার সমস্যা সমাধান প্রসঙ্গে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তারা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও বন্যার কারণ নির্ধারণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। এসময় বন্যকবলিত এলাকার মানুষকে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হবে।’
ত্রাণমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশে খাদ্যের অভাব নেই। একজন মানুষও না খেয়ে মরবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আমরা এভাবেই বাস্তবায়ন করব। এক্ষেত্রে আপনাদের সাহায্য চাই। মানুষ আতঙ্কিত হয় এমন সংবাদ প্রকাশ করবেন না।’
সভা শেষে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্ বলেন, ‘বন্যায় দুই লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এই জমি থেকে ছয় লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যেত।’ তা সত্ত্বেও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে শষ্যের উৎপাদন বেশি হওয়ায় দেশে খাদ্য ঘাটতি হবে না জানান তিনি।
আরও পড়ুন-
হাওরে ১২৭৬ মেট্রিক টন মাছ নষ্ট, হাঁস মরেছে ৩৮৪৪টি: মৎস্য সচিব
মোটাসোটা নেতাদের হাওরে পাঠান: খালেদার উদ্দেশে মায়া
‘হাওরে বোরো ধানের ৮৬ শতাংশই নষ্ট হয়েছে’
/এসআই/এমএ/টিআর/টিএন/