কেবল জুরাইন নয়, বর্ষা মৌসুমের আগে থেকেই শুরু হওয়া বর্ষণের তোড়ে রাস্তাঘাটের এমন বেহাল অবস্থা রাজধানীর অনেক এলাকাতেই। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পূর্ব জুরাইন কদমতলি, খোরশেদ সরদার রোড, এ কে আলী সরদার রোড, খোরশেদ আলী সরণি, উত্তর যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণ-পূর্ব যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, ওয়াপদা কলোনি, মীরহাজিরবাগ, ধোলাইপাড়, গেন্ডারিয়া, মুরাদপুর, পশ্চিম জুরাইন, করিম উল্লাহবাগ, নতুন জুরাইন আলম বাগ, পশ্চিম জুরাইনের মাজার এলাকা ও ডিএনডি বাঁধসহ আশপাশের পুরো এলাকা সারাবছরই পানি জমে থাকে। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা হওয়ায় সুয়ারেজ লাইনের পানিতেই ডুবে থাকে এসব এলাকা।
সড়কের জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে সিরাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনের কাছে ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘এই এলাকার জলাবদ্ধতা নিয়ে হাজারও রিপোর্ট হয়েছে। শত শত মন্ত্রী-এমপি-মেয়র-কাউন্সিলর শত শত প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু বছরের পর বছর চলে গেলেও প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয় না। ভোটের আগে সবাই জনদরদি হয়ে পড়েন। তখন লুঙ্গি পরে হাঁটু পানিতে নেমে খোঁজ-খবর নেন, ভোট চান। ভোট হয়ে গেলেই আর তাদের দেখা মেলে না।’
ষাটোর্ধ্ব এই বৃদ্ধ বলেন, ‘২৫ বছর হলো আছি এই এলাকায়। এই সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েক ডজন জনপ্রতিনিধি পেয়েছি। সবার কাছেই আমরা গিয়েছি। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পাইনি।’ ঈদের সময়েও পানিবন্দি থাকতে হবে জানিয়ে সিরাজুল বলেন, ‘ঈদের মধ্যেও এভাবে ঘরের মধ্যে বন্দি হয়ে থাকা তো জেলখানায় থাকার চেয়েও বেশি কষ্টের।’
এ কে আলী সরদার রোডের আলম ডেকোরেটারের পরিচালক আলম বলেন, ‘১৫ বছর ধরে এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখে আসছি। বছরে একটা দিনও সড়কগুলোর তলা দেখা যায় না। সারাবছর ডুবে থাকে পানিতে। রিকশা-সিএনজি ভাড়া দিতে দিতে সব শেষ। এলাকায় এখন কেউ জায়গা জমিও কিনতে চায় না।’
স্থানীয়রা জানান, বছরের প্রায় প্রতিটি দিনই পানির নিচে তলিয়ে থাকে রাজধানী ঢাকার জুরাইনের কয়েক লাখ মানুষ। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে রাস্তার মাঝেও হাঁটু পানি থাকে এই এলাকায়। কোনও ধরনের বাহন ছাড়া পায়ে হেঁটে চলার উপযোগী নয় রাস্তাগুলো। এসব রাস্তায় সুয়ারেজ লাইনের পানি প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি পর্যন্ত বিস্তৃত। সেই পানি ঢুকে পড়েছে খানিকটা নিচু অনেক বাড়িতেই। আর পানিতে ভেসে থাকে বাসা বাড়ির ময়লা-আবর্জনা থেকে শুরু করে সব ধরনের বর্জ্য। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাগুলোতেই পানি হয়ে যায় গলা সমান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মঙ্গলবার (২০ জুন) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জুরাইন ও ডিএনডি বাঁধ এলাকা নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা দীর্ঘদিনের। এই এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্প পাস হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে বড় পাম্প বসিয়ে পুরো এলাকার পানি বুড়িগঙ্গা নদীতে নিষ্কাশন করা হবে। এর মাধ্যমে যেসব এলাকায় পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে। আগামী বছর থেকে সেখানে আর জলাবদ্ধতা থাকবে না।’
প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘বর্তমানে ডিএসসিসি এলাকায় তেমন জলাবদ্ধতা নেই। শান্তিনগরে বড় ধরনের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় জলাবদ্ধতা ৮০ শতাংশ কমে গেছে। ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের কারণে একটু সমস্যা রয়েছে। তবে আগস্টের দিকেই আর কোনও সমস্যা থাকবে না।’ তবে ডিএসসিসির আওতায় থাকা নাজিম উদ্দিন রোডে জলাবদ্ধতায় থাকায় এই এলাকাতেও একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ছবি- নাসিরুল ইসলাম
আরও পড়ুন-
বুধবার বিমানের অভ্যন্তরীণ সব ফ্লাইট বাতিল
সিলেটে নতুন বাড়িতে ওঠা হলো না লন্ডনে নিহত মকররম আলীর
/এসএস/এসএমএ/টিআর/