সুমাইয়ার মতোই রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড়ে পরিবার নিয়ে নিজের কাঙ্ক্ষিত বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন বেসরকারি একটি ব্যাংকে কর্মরত শহীদুজ্জামান। গন্তব্য লালমনিরহাট। তার বাস আসতে ঘণ্টাখানেক দেরি হবে। তাতে অবশ্য তিনি খুব বেশি বিরক্ত নন। বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘এর আগে এক বছর তো সকালের বাসে উঠেছি সন্ধ্যায়। সে তুলনায় এই এক ঘণ্টার লেট তেমন কিছুই না।’ তবে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার জন্য এই অপেক্ষার সময়টা কাটানো কষ্টের বলে মন্তব্য তার।
বছরের অন্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি যাত্রীর চাপ থাকায় রাজপথ, নৌপথ, রেলপথে যানবাহনের সংখ্যাও ঈদ মৌসুমে কয়েকগুণ। ফলে মহাসড়কে তীব্র যানজট বাঁধতে সময় লাগে না। এতে করে ভেঙে পড়ে গাড়ির শিডিউল। সকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া গাড়িটি সময়মতো যেমন পৌঁছাতে পারে না কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে, তেমনি সেখান থেকে ঢাকাতেও আসতে পারে না সময়মতো। ফলে ওই ফিরতি গাড়ির সময়সূচি এলোমেলো হয়ে পড়ে। সে কারণেই গাড়ির শিডিউল ঠিক রাখা দায়।
একই চিত্র রেলপথ ও নৌপথেও। ঈদের বাড়তি যাত্রী বহনে প্রতিবছরই রেলবহরে যোগ হয় বাড়তি ট্রেন। তার চাপ নিতে গিয়ে ট্রেনের শিডিউলেও দেখা যায় বিপর্যয়। লঞ্চের ক্ষেত্রেও চিত্রটা ব্যতিক্রম নয়। লঞ্চগুলো কেবিনের টিকিট অগ্রিম বিক্রি করলেও ডেকের যাত্রীদের জন্য অগ্রিম টিকিট বিক্রি করে না। তাৎক্ষণিকভাবে ডেকের টিকিট বিক্রি করে পরিমাণমতো যাত্রী তুলে তবেই ছেড়ে দেয় লঞ্চ। ফলে যাত্রীর চাপ খুব বেশি না থাকলে লঞ্চে উঠেও অপেক্ষা করতে হয় সহযাত্রীদের জন্য।
রেলপথের চিত্রও এবারে একটু ভিন্ন। ট্রেনের চিরাচরিত ঈদ মৌসুমের শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা নেই বললেই চলে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, কেবল রংপুর এক্সপ্রেসই সময়মতো ছাড়তে পারছে না। বাকি ট্রেনগুলো তাদের নির্ধারিত সময়সূচি মেনেই রওনা দিচ্ছে গন্তব্যে।
ঈদুল ফিতরে অনেকেই বাড়ি যান আগের বছরের ঈদুল আজহার পর প্রথমবারের মতো। তাই এই ঈদে বাড়ি যাওয়া নিয়ে সবার মধ্যে উত্তেজনা কাজ করে একটু বেশিই। সন্তানদের মধ্যে কাজ করে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। আবার দাদা বাড়ি বা নানা বাড়ি যাওয়ার উত্তেজনাতেও অধীর হয়ে থাকে নাতি-নাতনিরা। বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন বা লঞ্চ টার্মিনালে নিজ নিজ যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে তাই তাদের ভাবনায় কাজ করে একটিই কথা- কখন যাবো বাড়ি!
/এসএস/এমটি/টিআর/