সাঁওতালদের ‘হুল’ ১জমির অধিকার ধরে রাখার অন্যতম হাতিয়ার ‘হুল’ বিদ্রোহের ১৬২তম বার্ষিকী পালিত হয়েছে। দেড়শ বছর আগে ‘জমি চাই মুক্তি চাই’ স্লোগানে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেও সাঁওতাল জনগোষ্ঠী আজও সে অধিকার বুঝে পায়নি। একের পর এক উচ্ছেদ আর আগুন সন্ত্রাসের কবলে পড়ে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে তাদের। সেই বঞ্চনার অবসান ও তাদের জমির অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন করে সংগঠিত হওয়ার অঙ্গিকারের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়।
এ উপলক্ষে দিনাজপুরের বারকোনায় শুক্রবার (৩০ জুন) সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬২তম বর্ষপূর্তিতে সিধু-কানুর স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সকাল থেকে কেবল বারকোনাই নয়, গাইবন্ধার বাগদা ফার্ম এলাকা ও রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চলে দিনটি স্মরণে নানা অনুষ্ঠান পালন করা হয়েছে।
সাঁওতালদের ‘হুল’এই দিনে প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল কৃষক মিলে ভারতের চব্বিশ পরগনায় ভাগনাদিহি গ্রামে এক গণসমাবেশ থেকে বিদ্রোহের ডাক দেন। সাঁওতাল সমাজে এই বিদ্রোহ ‘হুল’ নামে পরিচিত। সেদিন ভাগনাদিহি গ্রামের সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব এবং দুই বোন ফুলমণি ও জানমণির নেতৃত্বে অত্যাচারী ও নিপীড়কদের প্রভাবশালী অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় সাঁওতালরা। তাদের হারানো জমি পুনরুদ্ধার করে স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠার শপথ নেয়: ‘আবুদ শান্তি বোন খজোয়া জমিবুন হাতা ওয়া’ অর্থাৎ ‘জমি চাই, মুক্তি চাই’ স্লোগানে।’
সাঁওতাল বিদ্রোহের মূলে ছিল ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ। সাঁওতালরা বংশ পরম্পরায় সম্পদের প্রথাগত সামাজিক মালিকানায় বিশ্বাস করতো। অথচ তখন ছিল জমিদারী প্রথা ও মহাজনী শোষণ। সাঁওতাল বিদ্রোহ ঘোষণার দিন ইংরেজ সরকার, কমিশনার, দারোগা, ম্যাজিস্ট্রেট ও জমিদারদের চরমপত্র পাঠানো হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়। কিন্তু ইংরেজরা দমন-পীড়নের পথ বেছে নেয়। বিদ্রোহ দমনের নামে চালানো হয় নৃশংস হত্যাকাণ্ড। সংগ্রামরত ভাগলপুরে নিহত হন চাঁদ ও ভৈরব। পরে সিধু ও কানুসহ অন্য নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়।
/ইউআই/এসএমএ/