বৃক্ষমানব বলে দেশ-বিদেশে পরিচিতি পাওয়া আবুল বাজানদারের ব্যাপারে বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য দেন ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন। আবুল বাজানদারকে নিয়মিত ফলোআপে রাখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্মাণাধীন নতুন হাসপাতালে (নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট) চাকরি দিয়ে তাকে রেখে দেওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি আমরা। তাহলে বাজানদার আমাদের নিয়মিত ফলোআপে থাকবে, চোখের সামনে থাকবে।
এ প্রতিবেদকের সামনে সেখানেই দেখা হয় বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও আবুল বাজানদারের সঙ্গে। আবুল বাজানদার মুশফিককে দেখে হাসিমুখে এগিয়ে আসেন, চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান মুশফিকুর রহিম। বাজানদারের বাম হাত তখন ব্যান্ডেজ করা আর ডান হাতটি খোলা, একদম স্বাভাবিক। সে হাতেই বাজানদার হাত মেলান মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে।
হাত ভালো হয়ে গেছে বাজানদার মন্তব্য করতেই ডা. সামন্ত লাল সেন পুরনো ফাইল থেকে বের করেন আবুল বাজানদার যেদিন প্রথম বার্ন ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন সেই ছবি। দুই হাতে শেকড়ের মতো মাংসপিণ্ড নিয়ে শীর্ণকায় আবুল বাজানদারের ছবি দেখে বিস্মিত হন মুশফিক।
এদিকে মুশফিকের দেখা পাওয়ায় আপ্লুত আবুল বাজানদার। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এরকম একজন মানুষকে জীবনে দেখবো সেটা কোনোদিন চিন্তাও করি নাই। উনি আমার হাত ধরে ছিলেন, ভাল-মন্দ জিজ্ঞেস করেছেন। আমার খুব ভালো লাগছে।’
বিরল রোগ ইপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভ্যারুসিফরমিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৭ বছর বয়সী বাজানদার। তার চিকিৎসায় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে নয় সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়।
বাংলাদেশে বাজানদারই এই রোগের প্রথম রোগী, আর বিশ্বে তৃতীয়। তার চিকিৎসার পুরো খরচ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বহন করছে। ১৫ বছর বয়সে বাজানদারের হাতে ও পায়ে গাছের শেকড়ের মতো মাংসপিণ্ড তৈরি হয়। যে কারণে তিনি পরিচিতি পান ‘বৃক্ষমানব’ হিসেবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাজানদার এখন একজন স্বাভাবিক মানুষের মতোই হাত দিয়ে কলম ধরতে পারেন। নিজ হাতে ধরে পত্রিকা পড়া এবং একমাত্র মেয়েকে কোলেও নিতে পারেন। তিনি বলেন, ‘দেড় বছর আগেও হাত ছিল ভারী, কিছু ধরতে পারতাম না, নিজে নিজে চলাফেরাও করতে পারতাম না। কিন্তু সময় বদলে গেছে, এক বছর আগের বাজানদারের সঙ্গে আজকের বাজানদারের বিস্তর ফারাক।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের পাঁচ তলার একটি কেবিনে আবুল বাজানদারের দিন কাটছে । সেখানে তার সব সময়ের সঙ্গী স্ত্রী হালিমা খাতুন এবং সাড়ে তিন বছরের মেয়ে তাহিরা।
/টিএন/আপ-এমপি/