আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ২০ জুলাই সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে জড়ো হন। কিছুক্ষণ পর বিভিন্ন দাবি নিয়ে মিছিল বের করেন তারা। জাদুঘরের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগ চত্বর ঘুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির দিকে যাওয়ার লক্ষ্য ছিল তাদের। মিছিলটি শুরু হওয়ার পরপরই পুলিশ সদস্যরা ৩-৪টি গ্রুপে ভাগ হয়ে ছাত্রদের হটিয়ে শাহবাগ চত্বরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। একপর্যায়ে জাদুঘর সংলগ্ন ওভারব্রিজের নিচে রাস্তার বামপাশের ফুটপাতে রেলিংয়ের মধ্যে ছাত্রদের অবস্থান নিতে বাধ্য করে পুলিশ। এরপর আশপাশ থেকে আরও শিক্ষার্থী জড়ো হতে থাকলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। ধাক্কাধাক্কি ও ধস্তাধস্তি চলতে থাকে। পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে থাকে। সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রদের একটি অংশ তখন কাঁটাবনের রাস্তায় অবস্থান নেয়। আর পুলিশ অস্ত্র নিয়ে তাদের মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে ছাত্রদের খুব কাছে গিয়ে সিদ্দিককে টার্গেট করে টিয়ারশেল ছুড়ে মারা হয়।
একটি ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে তাদের থেকে কিছু দূরে বিপরীত দিকের ওভারব্রিজের নিচে অবস্থান নেয় সশস্ত্র পুলিশ সদস্যরা। এতে দু’পক্ষের মধ্যে কিছুক্ষণের জন্য উত্তেজনাও দেখা দেয়। কয়েক রাউন্ড গুলিরও শব্দ শোনা যায়। এরপরই কয়েকজন পুলিশ সদস্য খুব কাছাকাছি চলে এলে বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই পিছু হটতে থাকেন। তবে ব্যানার ধরে তখনও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করেন। ওইসময় নীল পাঞ্জাবি পরিহিত সিদ্দিক তার আগের অব্স্থান থেকে সরে রাস্তার মাঝখানে চলে আসেন। ওইসময় কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে পুলিশের একজন সদস্য সিদ্দিকের অবস্থান লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেন। সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন সিদ্দিক।
মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) শাহবাগ থানায় গিয়ে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই মাজহারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা গাড়ি ভাঙচুর করেছে। ইট-পাটকেল ছুড়ে মেরেছে। ছোট ছোট দইয়ের পাত্রও ছুড়ে মেরেছে। তাদের ছুড়ে মারা ওই দইয়ের পাত্রের আঘাতেই সিদ্দিকের চোখ রক্তাক্ত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন,‘ঘটনাস্থল থেকে ১৫ টাকা দামের দইয়ের একটি পাত্র জব্দ করা হয়েছে। কাজেই পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলের আঘাতে তার চোখের কোনও ক্ষতি হয়নি।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই দেবরাজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেডিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্টের পর সিদ্দিকের চোখের আঘাতের কারণ জানা যাবে। তবে আমরা মামলার আলামত হিসেবে একটি ছোট দইয়ের পাত্রের খোল, গাড়ির ভাঙা কাচ ও ইট-পাটকেলের টুকরা জব্দ করেছি।’ তিনি বলেন, ‘অজ্ঞাতনামীয় এক হাজার থেকে ১২শ’ বিক্ষোভকারীকে আসামি করে মামলা হলেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।’
তিনি বলেন,‘নিয়ম অনুযায়ী টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে গেলে অস্ত্র উঁচু করতে হয় ৪৫ ডিগ্রি কোণে। এতে কোনোভাবেই কোনও শিক্ষার্থীর শরীরে আঘাত লাগার কথা নয়। কাজেই পুলিশের মধ্য থেকে কেউ অন্য কোনও উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা তাও কঠোর গোপনীয়তায় তদন্ত করা হচ্ছে। এ জন্য বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হামলার ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণ করা হচ্ছে।’ ফুটেজ সংগ্রহ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই দেবরাজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলার তদন্তের জন্যই বিভিন্ন ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে।’
শাহবাগের ওইদিনের ঘটনার টাইমলাইন:
সকাল ১০:০০টা: শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে রাজধানীর সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীরা একে একে জড়ো হতে থাকেন।
সকাল ১০:৩০-১১:০০টা: মিছিল বের করার পর জাদুঘর সংলগ্ন ওভারব্রিজের নিচে ফুটপাতের রেলিংয়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ঘিরে রাখে পুলিশ।
বেলা ১১:২০-১১:৩০ মিনিট: পুলিশের তাড়ায় ওভারব্রিজের নিচে কাঁটাবনে যাওয়ার রাস্তায় অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ। এসময় তাদের মুখোমুখি অবস্থান নেয় পুলিশ।
বেলা ১১:৪৫-১১:৫০ মিনিট: আন্দোলনকারী ছাত্রদের অবস্থানের দিকে এগোতে থাকেন পুলিশ সদস্যরা। অস্ত্র উঁচিয়ে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেন এক পুলিশ সদস্য। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সিদ্দিক।
বেলা ১১:৫৫-১২:০০টা: পুলিশ বেষ্টনীতে থাকা কয়েকজন যুবক পড়ে থাকা সিদ্দিকের কাছে যান। পুলিশ জায়গা ছেড়ে চলে যেতে থাকে।
দুপুর ১২:০০-১২:১০ মিনিট: শাহবাগ চত্বর ফাঁকা হয়ে যায়।
এ সংক্রান্ত ভিডিও’র লিংক-
/এসএমএন/এএম/টিএন/