চোখ উপড়ে ফেলার অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করবে শাহজালালের পরিবার

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাহজালালখুলনার খালিশপুরে আহত যুবক শাহজালাল একটু সুস্থ হলে ‘চোখ তুলে ফেলার অভিযোগে’ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন তার বাবা জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের জীবন ওরা (পুলিশ) নষ্ট করে দিছে। ওর (শাহজালাল) শরীর কিছুটা ভালো হলেই আমি পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করবো।  আমি এই ঘটনার বিচার চাই। এর জন্য যা যা করা দরকার সবই করবো।’

এদিকে, চোখে অপারেশন করা হলেও শাহজালালের দৃষ্টি ফিরবে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা। তার পরিবারের অভিযোগ,কয়েকজন পুলিশ চাঁদাবাজির পর তার দুই চোখ উপড়ে ফেলেছে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফরিদুল হাসান শাহজালালের পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন, ‘অপারেশন করে রিপেয়ারের কাজ করা হয়েছে। কিন্তু তার চোখের দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত না।’

এদিকে পুলিশের অভিযোগ, গত ১৮ জুলাই রাতে ছিনতাই করে পালানোর সময় জনগণ ধরে শাহজালালকে গণপিটুনি দেয়। এতে তার চোখ নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে খবর পেয়ে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।

তবে ভুক্তভোগী ও তার স্বজনদের দাবি, শ্বশুরবাড়ির সামনে থেকে শাহজালালকে তুলে নেয় পুলিশ। থানায় নিয়ে মারধরের পর এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। কিন্তু টাকা না পেয়ে থানা থেকে বাইরে নিয়ে  খুলনা বিশ্বরোডে তার হাত-পা ও মুখ বেঁধে দুই চোখ উপড়ে ফেলে পুলিশ। এরপর মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি ঢামেক হাসপাতালে আটক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

শাহজালালের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ঢামেক হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফরিদুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। তার দুই চোখই মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা অপারেশন করে রিপেয়ার করার চেষ্টায় আছি। আজকে (মঙ্গলবার) ডান চোখে ইনফেকশন ধরা পড়েছে।’

শাহজালাল চোখের আলো ফিরে পাবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. ফরিদুল হাসান বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না।’

শাহজালালের বাবা জাকির হোসেন চিকিৎসকের বরাত দিয়ে বলেন, ‘উনারা বলছেন, চোখ আর ভালো হবে না। আমার ছেলে সারাজীবনের জন্য অন্ধ হয়ে যাবে। আমি এই অন্যায়ের বিচার চাই।’

শাহজালাল ছিনতাইয়ের ঘটনায় গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছিলেনএমনটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে খুলনায় ঘটনাস্থলের স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে রেলক্রসিংয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনার পর এক নারীর চিৎকারে লোকজন জড়ো হয়। এ সময় একজনকে ধরে জনতা মারধর করে। তখন বেশ চিল্লাচিল্লিও হয়। পরে পুলিশ এসে আটক করা লোকটিকে নিয়ে যায়। তিনিই শাহজালাল কিনা তা তারা বলতে পারছেন না।

তার চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছিল কিনা তাও কেউ বলতে পারেননি। স্থানীয় ব্যবসায়ী রাকীব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেক লোকজনের ভিড়ের মধ্যে ঘটনা সম্পর্কে ভালোভাবে কিছু বোঝা যায়নি।’

আরেক ব্যবসায়ী সোহেল সরদার বলেন, ‘মোড়ে অনেক লোকের ভিড় ছিল। দোকান থেকে শুধু লোকজনের চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। পরে পুলিশ এসে একজনকে নিয়ে যায়।’

ওই মোড়েই রয়েছে খালিশপুর থানা ছাত্রলীগের একটি অফিস। থানা ছাত্রলীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এম রশিদ আহমেদ মিম বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন এক ছিনতাইকারীকে আটক করে। তখন তাকে গণপিটুনি দেওয়ারও খবর পাওয়া যায়। পরে পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায়। তখন ছিনতাইকারীর কী অবস্থা ছিল তা দেখা হয়নি।’

এদিকে টাকা না পেয়ে চোখ তুলে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনার খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম খান বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, ‘এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়লে জনগণ তাকে মেরেছে। আমরা খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। পুলিশ দশ মিনিট পরে গেলে হয়তো তার লাশ পাওয়া যেত।’

/আরজে/এসএনএইচ/ এপিএইচ/

আরও পড়ুন: পুলিশের বিরুদ্ধে চোখ তুলে নেওয়ার অভিযোগ!