বিমানবন্দরে ইডিএস না থাকায় নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে গত বছরের জুন মাসে ইইউভুক্ত দেশগুলো আকাশপথে কার্গো পণ্য পরিবহণ কমিয়ে দেয়। এরপর তাদের পরামর্শে শাহজালালের নিরাপত্তার দায়িত্বে দেওয়া হয় ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেড লাইনকে।সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা কর্মীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশিসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের পরামর্শ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এর পরিপ্রেক্ষেতে দুটি এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস) যন্ত্র আমদানি করে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি। এরপর বিমানবন্দরে তা বসানোর কাজ শুরু করে।
সিভিল এভিয়েশন অথরিটি জানায়, এ দুটি যন্ত্র বসানো হলে ইইউ প্রতিনিধি দল বিমানবন্দরের কার্গো নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করবে।
এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিমান ও সিএ) আবুল হাসনাত মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘বিমানবন্দরে রফতানি কার্গোতে ইডিএস বসানোর কাজ এ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে। এটি শেষ হলে ‘হাই রিস্ক’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশেকে আর রাখবে না ইইউ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ জুলাই দুটি ইডিএস দেশে এসে পৌঁছে। এরপর এটি বসানো শুরু হয়। এ দুটি যন্ত্র বসানোর কাজ শেষে আগস্টের প্রথম সপ্তাহের দিকে ইইউ এবং যুক্তরাজ্যের যৌথ প্রতিনিধি দলকে বিমানবন্দরের কার্গো নিরাপত্তা পরির্দশনের আমন্ত্রণ জানাবে সিভিল এভিয়েশন। তাদের পর্যবেক্ষণ শেষে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে কার্গোতে পণ্য পাঠাতে বাড়তি তল্লাশির কাজ সম্ভব হবে বাংলাদেশেই।
সিভিল এভিয়েশন অথরিটি সূত্রে গেছে, এ বছর জুনে মাসে ইইউভুক্ত দেশগুলোকে কার্গোতে পণ্য পাঠাতে বাড়তি তল্লাশির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বাংলাদেশকে ‘হাই রিস্ক’ দেশ হিসেব ঘোষণা দেয় তারা। নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য কার্গোতে আকাশ পথে ওইসব দেশগুলোতে যাবে, সেসব পণ্য দ্বিতীয় দফায় স্কিনিং (তল্লাশি) করারও নির্দেশ দেয় ইইউ।
সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য কার্গোতে আকাশ পথে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে যাবে, সেসব পণ্য স্কিনিং (তল্লাশি) সেকেন্ডারি মেথড ফলো করতে হবে। প্রাথমিকভাবে শাহজালালে সব পণ্য স্কিনিং করা হয়। ইইউ নির্দেশনার ফলে প্রাথমিক স্কিনিংয়ের পাশাপাশি সেকেন্ডারি মেথড ফলো করতে হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের সুয়োগ না থাকায় তৃতীয় কোনও দেশ থেকে তা করা হয়। ইডিএস বসানো হলে তা আর প্রয়োজন হবে না। দ্বিতীয় ধাপে স্কিনিং এক্সপ্লোসিভ ডিটাকশন মেথডের মধ্যে এক্সপ্লোসিভ ডিটাকশন ডগ (কুকুর) দিয়েও স্কিনিং করা যেতে পারে অথবা এক্সপ্লোসিভ ডিটাকশন যন্ত্রও দিয়ে তা করা যেতে পারে।
এদিকে, শাহজালালে বিস্ফোরক সনাক্তকরণ যন্ত্রসহ আধুনিক স্কিনিং যন্ত্র বসানোর প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। যাত্রীদের লাগেজ তল্লাশি, যানবাহন তল্লাশি, তরল বিস্ফোরক সনাক্ত করতে আলাদা যন্ত্র বসানো হচ্ছে। ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেডলাইনের পরামর্শে এসব যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। এরমধ্যে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি সংযোজনের কাজ চলছে। উজোজাহাজের হোল্ডে রাখার মতো ভারী ব্যাগ তল্লাশির জন্য ডুয়েল ভিউ এক্স-রে স্ক্যানিং মেশিন আটটি, হ্যান্ড ব্যাগ তল্লাশির জন্য ডুয়েল ভিউ স্ক্যানিং মেশিন ১৪টি, লিকুইড এক্সপ্লোসিভ ডিটাকশন সিস্টেম (এলইডিএস) ছয়টি, আন্ডার ভিহিকল স্ক্যানিং সিস্টেম (ইউ ভি এস এস) নয়টি, ফ্যাপ বেরিয়ার গেট উইথ কার্ড রিডার চারটি, বেরিয়ার গেট উইথ আরএফআইডি কার্ড রিডার পাঁচটি, এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস) দুটি, এক্সপোসিভ ট্রেস ডিটেকশন (ইটিডি) চারটি কেনা হয়েছে। এরমধ্যে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি শাহজালালে সংযোজন হয়েছে, কিছু সংযোজনের কাজ চলামান রয়েছে। বাকি যন্ত্রপাতি ঢাকায় আসলে সংযোজন করা হবে।
উল্লেখ্য, বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নেওয়া বিশেষ প্রকল্প গত বছর ৮ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন দেয়। এরপর দেশের অভ্যন্তরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য জরুরি সরঞ্জাম সরবরাহ ও সংস্থাপন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয় ৮৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন
বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে: মেনন
বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত দেশের সমপর্যায়ে উন্নীত: মেনন
/সিএ/এসএমএ/