বুধবার ধানমণ্ডির জলাবদ্ধতাপ্রবণ সড়ক পরিদর্শন করতে এসে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন আবারও বলেন, এই জলাবদ্ধতার দায় ঢাকা ওয়াসার। আর উত্তর সিটির মেয়র অনিসুল হক বলছেন, তার হাতে কোনো ক্ষমতা বা জাদু নেই।
এদিকে, ঢাকা ওয়াসার সাফ জবাব, পৃথিবীর কোনও দেশে যারা বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করে, ময়লা পানি তাদের দায়িত্বে থাকে না। এমন কি দেশের ভেতরে চট্টগ্রাম শহরেও এই দায়িত্ব চট্টগ্রাম ওয়াসার কাঁধে নেই। শুধু ঢাকা শহরই ব্যতিক্রম।
জলাবদ্ধতার দায়িত্ব কোনও সংস্থা নিতে না চাইলেও আইনেই বিষয়টি স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ১৯৮৯ সালে শহরের পানি নিষ্কাশনের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা ওয়াসাকে। পাশাপাশি এ কাজে যুক্ত হয় ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ আরও কয়েকটি সংস্থা। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো দায়িত্ব পালন করলেও ঢাকা ওয়াসা তার মূল দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের নামে এখন কোটি কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত। ফলে ওয়াসার এই ব্যর্থতার দায় যাচ্ছে সিটি করপোরেশনের ঘাড়ে। তাই দুই সিটি করপোরেশন ওয়াসার ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে নিতে চায়।
বুধবার রাজধানীর মিরপুর এলাকার সাংবাদিক আবাসিক এলাকার খাল পরিদর্শনে গিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমরা কো-অর্ডিনেশন মিটিং করেছি। ওয়াসা বলেছে, মেয়রকে দায়িত্ব দিয়ে দাও। আমরা বলেছি, আমরা দায়িত্ব নিতে চাই। কিন্তু কিভাবে? টোটাল শহরই বন্ধ হয়ে গেছে। কাল-পরশুর মধ্যে সমাধান হবে না। আমরা আশা করি বৃষ্টি আরও কম হোক। মেয়রের হাতে আসলে কোনও জাদু নেই। কারও হাতেই কোনও জাদু নেই। যেভাবে আমরা খাল বন্ধ করে রেখেছি সেখানে মেয়র কী করবে? মেয়রের হাতে তো ক্ষমতা নেই দখলকারীদের তুলে দেওয়ার।’
ঢাকার বৃষ্টি মানেই জলাবদ্ধতা। আর জলাবদ্ধতার দায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট তিন সংস্থার কাদা ছোড়াছুড়িতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। নির্বাচনের সময় আনিসুল হক সব সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান যাত্রা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তিনিই এখন বলছেন, আমার হাতে কোনও ক্ষমতা নেই। অপরদিকে সাঈদ খোকন এই জলাবদ্ধতাকে সবার আগে প্রাধান্য দিবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
তিন সংস্থার প্রধানদের এমন অবস্থানে নগরবাসীর প্রশ্ন, জলাবদ্ধতার দায় যদি তারা কেউ নিতে না চায়, তাহলে এই দায় কার? সম্প্রতি জলাবদ্ধতা নিয়ে অনুষ্ঠিত ডিএনসিসির এক অনুষ্ঠানে নগর পরিকল্পনাবিদ মোবাশ্বের আলী মেয়র আনিসুল হককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কোনও সংস্থাই যখন এর দায় নিবে না। তাহলে জনগণই এর জন্য দায়ী!’
অপরদিকে স্থপতি ইকবাল হাবিবের মতে, হাঁটু পানি কিংবা কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে শুধু প্রতিশ্রুতি দিলেই হবে না। এ জন্য জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
জলাবদ্ধতার কারণ উল্লেখ করে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের দুটি পথ রয়েছে। প্রথমত ভূ-গর্ভে পানি শোষণ করে নেওয়া এবং অন্যটি খাল বিল ও ড্রেন দিয়ে নদীতে চলে যাওয়া। রাজধানী ঢাকায় এই দুটি পথের একটিও কার্যকর নেই। যে কারণে জলাবদ্ধতা বাড়ছে। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে জনগণকে সম্পৃক্ত করে পরিকল্পিত উপায়ে খাল উদ্ধার করতে হবে।’
আরও পড়ুন-
লন্ডনে দুই বাঙালি তরুণের ওপর এসিড হামলা
শাহজালালে বসানো হচ্ছে এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম
‘নিশ্চিত থাকেন, আগামী বছর রাজধানীতে জলাবদ্ধতা থাকবে না’
/টিএন/