অন্যদিকে, মামলা থাকায় রাজউক চাইলেও বাড়িগুলোর দখলে যেতে পারছে না। কয়েকটিতে রাজউকের পক্ষে রায় আসলেও অধিকাংশ মামলা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। পরিত্যক্ত তালিকার ওইসব প্লটে নতুন ভবন নির্মাণের নকশাও অনুমোদন দিচ্ছে না রাজউক। মামলায় জেতা সম্ভব নয় মনে করেই দখলদাররা বাড়িগুলোতে থাকেন না বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে গুলশানের ১০৩ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর প্লটে (সাবেক সিইএন-ডি-২০) গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির ভেতরে একটি ডুপ্লেক্স ভবন থাকলেও তাতে কেউ বসবাস করছে না। রাজউকের তালিকায় এই প্লটের দখলদার নেছার মোহাম্মদ খান। তবে গেটের সামনে দায়িত্বরত পাহারাদার জানালেন, তিনি নেছার খান নামের কাউকে চেনেন না। তিনি বলেন, ‘বাড়ির মালিকরা দেশের বাইরে থাকেন। মাঝে মধ্যে শুধু দেখতে আসেন। শুনেছি, বাড়ি নিয়ে ডিআইটির (রাজউক) সঙ্গে সমস্যা আছে। কোর্টে মামলা আছে।’
নিজের বাড়ি কিভাবে রাজউকের পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকায় গেল সে প্রশ্ন রেখে গুলশানের ৪১ নম্বর রোডের ৬ নম্বর প্লটের মালিক পরিচয়দানকারী সুলতানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা আমাদের কেনা সম্পত্তি। এখন রাজউক বলে এটা তাদের। ভবন করতে নকশা অনুমোদন দিচ্ছে না। মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ অভিযানের কথা বলতে শুনি।’ তবে তিনি নিজেও বাড়িটিতে থাকছেন না বলে জানান।
কয়েক দশক ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের দখলে থাকা গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ১৫৯ নম্বর বাড়িটি উচ্চ আদালতের রায়ে গত ৭ জুন উচ্ছেদ করে রাজউক।
রাজউক সূত্র জানিয়েছে, ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে এসব জমি প্লট আকারে বরাদ্দ দিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। তৎকালীন ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি) থেকে পাকিস্তানি নাগরিকরা এসব প্লট বরাদ্দ পেয়েছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তারা বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। ১০ কাঠা থেকে দুই বিঘা পর্যন্ত আয়তনের এই প্লটগুলোর মালিক তৎকালীন ডিআইটি (বর্তমান রাজউক)। এসব বাড়ির অনেকটাই এখন আর রাজউকের দখলে নেই। প্রভাবশালীরা নানা কৌশলে এগুলো দখলে রেখেছেন।
সূত্র জানায়, চারদলীয় জোট সরকারের সময় এমন ১৮টি প্লট ও বাড়ি নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বাড়িগুলো এখন রাজউকের হাতছাড়া। তবে এ ঘটনায় সংস্থার ক্ষতি হওয়ায় সাবেক পূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাস ও রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান শহিদ আলম, ইকবাল উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কয়েকজন জেলও খেটেছেন।
রাজউকের বেদখল হওয়া বাড়িগুলো হচ্ছে- গুলশানের ১৪ নম্বর সড়কের ৪ নম্বর বাড়ি, ৪৪ নম্বর সড়কের ৩০এ নম্বর বাড়ি, ৪১ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়ি, ১১ নম্বর সড়কের ৩ নম্বর বাড়ি, ৯৩ নম্বর সড়কের ১৫/সি প্লট, ৯৬/৯৩ সড়কের ১৯ নম্বর প্লট, ১০১/১০৩ নম্বর সড়কের ১৩ নম্বর প্লট, ১০৮ নম্বর সড়কের ১৪ নম্বর প্লট, ১০৮/১১২ নম্বর সড়কের ১ নম্বর প্লট, ১০৯ নম্বর সড়কের ৪ নম্বর প্লট, ১১৫ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর প্লট, ১১৬ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর প্লট, গ নম্বর সড়কের ৮০ নম্বর প্লট, ৪৯/ক নম্বর সড়কের ১ নম্বর প্লট, ৪৯ নম্বর সড়কের ১ নম্বর প্লট, ৪৭/৪৮ নম্বর সড়কের ২ নম্বর প্লট, ৪১ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর প্লট, ৪৪ নম্বর সড়কের ৩০/এ নম্বর প্লট, ৪৪/গ নম্বর সড়কের ৩০/এ নম্বর প্লট, গ নম্বর সড়কের ১১৩ নম্বর প্লট।
গ নম্বর সড়কের ১০৫ নম্বর ও ৭৯ নম্বর প্লট, ১৬/২১ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর প্লট, ৩ নম্বর সড়কের ৭২ নম্বর প্লট, ৭১/৭৪ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর প্লট, ৮৭ নম্বর সড়কের ৪ নম্বর প্লট, ৫৯ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর প্লট, ৫৪ নম্বর সড়কের ১৩ নম্বর প্লট, ৫৩ নম্বর সড়কের ১২ নম্বর প্লট, ৫০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর প্লট, গ-১১ নম্বর সড়কের ৩৫ নম্বর প্লট, ১১ নম্বর সড়কের ৩ নম্বর প্লট, ১৪ নম্বর সড়কের ৪ নম্বর প্লট, ২/১ নম্বর সড়কের ২ নম্বর প্লট, ৪৬/৫২ নম্বর সড়কের ২৭ নম্বর প্লট, বনানী ডি ব্লকের ১৩ নম্বর রোডের ৪৭ নম্বর প্লট, বনানীর জি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ৩১ নম্বর বাড়ি, সি ব্লকের ৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়ি, ডি ব্লকের ১৩ নম্বর সড়কের ২৫ নম্বর বাড়ি, ই ব্লকের ১৭/এ, ১২ নম্বর সড়কের ১২ নম্বর বাড়ি, আই ব্লকের ৩ নম্বর সড়কের ২৮ নম্বর বাড়ি, জি ব্লকের ৭ নম্বর সড়কের ৩১ নম্বর বাড়ি। এছাড়া, ২২ দিলকুশার প্লট ও ৫৪ মহাখালীর প্লটও এ তালিকায় রয়েছে।
রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) আসমাউল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এমন প্লটগুলোর সব ক’টির বিরুদ্ধে মামলা চলছে। মামলার কারণে আপাতত কিছু করা যাচ্ছে না। যে কয়েকটিতে রায় হয়েছে, রায় আমাদের পক্ষেই হয়েছে। সেগুলো আমরা দখলে নিয়েছি। আশা করি, বাকিগুলোতেও আমরা জিতবো। এরপর এক এক করে দখলে নেবো।’
ছবি: নাসিরুল ইসলাম
/এএম/আপ-এসএনএইচ/