রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছেলের রিলিজ হওয়ার পর তিনি হাসপাতালের বাইরে বসেছিলেন সিএনজির অপেক্ষায়। সেখানেই তার সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। তিনি জানান, হঠাৎ শুরু হওয়া তীব্র জ্বরের কারণে ছেলে তানভীরকে হাসপাতালে ভর্তি করান ২৯ আগস্ট। তারপর হাসপাতালেই কেটেছে মা-ছেলের ঈদ। ঈদের দ্বিতীয় দিন এসে ছাড়া পেয়েছেন তারা।
আফরোজা বলেন, ‘ঈদের সময় হাসপাতাল নিয়ে যে ভীতি ছিল, তা আর নেই। ভয় যেমন পেয়েছিলাম, তেমন ভয়ের কিছু পাইনি। অনেকেই বলেছিলেন, ঈদের ছুটিতে হাসপাতালে ডাক্তার থাকেন না, কাউকে ডাকলে পাওয়া যায় না। কিন্তু ভুক্তভোগী হয়ে দেখলাম, পরিস্থিতি উল্টো। আমরা রোগী হয়ে হাসপাতালে ছিলাম বটে। কিন্তু চিকিৎসকরাও ছিলেন আমাদের পাশেই— এটা অনেক বড় পাওয়া।’
চিকিৎসক, আফরোজা পারভীন ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদে সব অফিসে ছুটি থাকলেও হাসপাতালে ছুটি নেই, থাকেও না। চিকিৎসক হয়তো কম থাকে, তবু চিকিৎসাসেবার কোনও কমতি হয় না।
ঈদের কয়েক দিন আগেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার। তিনি ভর্তি আছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে ঈদের ছুটির সময়ে চিকিৎসক থাকেন না, সেবা পাওয়া যায় না— এমন ধারণা একেবারেই সঠিক নয়। আমি তো দেখছি সব কার্যক্রম চলছে। চিকিৎসক, নার্সসহ প্রতিটি বিভাগে সবাই কাজ করছেন।’
ঈদের সময়ে চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা হাসপাতালে থাকেন না, রোগীদের ভোগান্তি চরমে ওঠে— এই অভিযোগ অনেকেই করে থাকেন। তবে কোরবানির দিন এবং পরদিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং পঙ্গু হাসপাতালে ঘুরে অভিযোগের ভিন্ন চিত্রই দেখা গেছে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবারের ঈদের ছুটিতে অধ্যাপকসহ ১২ জনের একটি টিম হাসপাতালে সার্বক্ষণিক সেবা দিয়েছেন। ঈদের দিন যেন রোগীদের মনে না হয় চিকিৎসক নেই, সেজন্য আমি ও কয়েকজন অধ্যাপকসহ আমরা দুইবার রাউন্ড দিয়েছি। চিকিৎসকদের পাঠিয়েছি রোগীদের কাছে গিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য।’ ঈদের পরদিন বহির্বিভাগে প্রায় দুইশ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
অধ্যাপক বড়ুয়া আরও বলেন, ‘এই হাসপাতালে ছুটির সময় ছাড়া প্রায় ১২শ রোগী ভর্তি থাকেন। চিকিৎসক, নার্সসহ জনবলের সংখ্যা ১১শ। তবে দুই ঈদের সময়েই রোগী ও চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের সংখ্যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশে চলে আসে। তাতে চিকিৎসকদের ওপর একটু চাপ থাকলেও রোগীদের সেবায় যেন কোনও বিঘ্ন না ঘটে, সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখা হয়।’
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদের আগের দিন ঈদের দিন ও আজ— এই তিন দিনই ডিউটি করেছি। আসলে হাসপাতালে কোনও বন্ধ নেই, হাসপাতাল বন্ধ থাকে না। চিকিৎসক যেমন কম থাকে, তেমনি রোগীও কম থাকে। এসময় চিকিৎসকদের ওপর চাপ থাকলেও রোগীদের সেবায় কমতি হয় না।’
আরও পড়ুন-
ত্যাগের ঈদে ভোটের রাজনীতি
নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্ত প্রধানমন্ত্রীকে অবসরে যেতে হবে: একান্ত সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল