আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক লে. কর্নেল রাশিদুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ত্রাণ সামগ্রী সেনাবাহিনী গ্রহণ করবে এবং তা যথাযথভাবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ভাণ্ডারে পৌঁছে দেবে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী সে কাজ শুরু করেছে।’
এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদকে বিষয়টি অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গা শিবিরে আগে থেকে ৪০ হাজার রোহিঙ্গার মাঝে যে পদ্ধতিতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে এখনও সেই পদ্ধতিতেই ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। বর্তমানে এর পরিধি বেড়েছে মাত্র। এ ক্ষেত্রে ইউএসএইচসিআর, আইএনওসহ আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো যৌথভাবে জেলা প্রশাসনকে সহায়তা করছে, বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা ফেরানোর বিষয়ে তৎপর রয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বণ্টনের সঙ্গে স্থানীয় কোনও জনপ্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্তও রয়েছে সরকারের।
নির্ধারিত ক্যাম্পের বাইরে কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফসহ আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নির্দিষ্ট ক্যাম্পে একত্রিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। ক্যাম্পের বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে পুনর্বাসন ও ত্রাণ বিতরণ উভয় কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সমস্যা সৃষ্টি হয়। আর সে কারণেই রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফেরাতে তৎপর রয়েছে সরকার।
জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ইতোমধ্যেই দেশি-বিদেশি সংস্থা ছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের কাছে ত্রাণ পাঠিয়েছে ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, ভারত, মালয়েশিয়া, আজারবাইজান। এসব ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে খাবার, শিশুখাদ্য, ওষুধ, তাবু, কাপড় ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের বিষয়টি পুরোপুরি তদারকি করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এছাড়া ক্যাম্পের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গা পরিবারদের জন্য অস্থায়ী ঘর তৈরি করছে নৌবাহিনী।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণের স্বার্থে জেলা ত্রাণ বিতরণ মনিটরিং করার জন্য একটি কমিটি রয়েছে। সেখানেই আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হয় কোন কোন এলাকায় ত্রাণ পাঠানো হয়েছে, কি হয়নি। আর সেভাবই কাজ করছে সবাই।’
জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সুষ্ঠুভাবে ত্রণ বিতরণে সমন্বয় খুব জরুরি। এ জন্যই আমরা সব কাজ জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে করার কথা বলেছি। যদিও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য এখন পর্যন্ত বেসরকারি ত্রাণের তেমন প্রয়োজন সেই। সব কিছুই সরকার ব্যবস্থা করছে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোও সহায়তা করছে। তারপরও বাঙালি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ জাতি। তাই তারা মানুষের এই দুঃখ-কষ্টের সময় এগিয়ে আসতে চাই, যার যা আছে তাই নিয়ে। আমরাও সাধারণ মানুষের আবেগকে শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু তা যদি সুশৃঙ্খল না হয় তাহলে সরকারের এই বিশাল মানবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হবে।
আরও পড়ুন-
বিক্ষোভে সু চির কফিনে আগুন
সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান জুমার খুতবায়
রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান আরাকান স্বাধীন করা: হেফাজত
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান হেফাজতের