‘জলবায়ু অর্থায়নে চাহিদা ও সরবরাহে স্বচ্ছতা গুরুত্বপূর্ণ’

টিআইবির ইন্টেগ্রিটি সংলাপজলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের কল্যাণে জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রে চাহিদা ও সরবরাহ উভয় প্রান্তে স্বচ্ছতা গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু তহবিল প্রদান ও তার ব্যবহারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, নাগরিক অংশগ্রহণ ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে দক্ষিণ এশিয়ার সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোকে জরুরিভাবে সামষ্টিক পদক্ষেপ নিতে হবে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী জলবায়ু বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সংলাপের শেষদিন মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এ মত দেন ঢাকায় আসা দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেন, যেহেতু দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো প্রশমন অপেক্ষা অভিযোজনকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করছে, তাই এ অঞ্চলের স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রয়োজন পূরণে জলবায়ু অর্থায়নের অধীন প্রকল্পগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে এ অঞ্চলের সরকারগুলোর চলমান উন্নয়ন কর্মসূচির মূলধারায় অভিযোজনকে অবশ্যই সন্নিবেশ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর ‘জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজন তহবিল ২: জলবায়ু অর্থায়ন ও সুশাসন বিষয়ে ইন্টেগ্রিটি ডায়ালগ’ শিরোনামে দুই দিনব্যাপী এ সংলাপে ভারত, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, মালদ্বীপ, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

টিআইবির ইন্টেগ্রিটি সংলাপজলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিতকরণ ও জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের আলোকে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ-১৩ ও প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে আঞ্চলিক প্রচেষ্টার সম্ভাব্য ক্ষেত্র ও উপায় অনুসন্ধান করাই ছিল এ সংলাপ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। সংলাপে বক্তারা একমত হন যে, জলবায়ু অর্থায়নে চাহিদা ও সরবরাহ উভয় প্রান্তেই স্বচ্ছতা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, জলবায়ু অর্থায়নের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নেও শুদ্ধাচার অনুশীলন চর্চা অর্থদাতা ও অর্থগ্রহীতা উভয়েরই জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। বেসরকারি খাতকে এসব প্রকল্পে কিভাবে যুক্ত করা যায় সে বিষয়ে উদ্ভাবনী উপায় খুঁজে বের করারও তাগিদ দেন বক্তারা। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুবিধায় অভিযোজন অর্থায়নে স্বচ্ছতা জোরদারকরণে সমতা, অংশগ্রহণ, সংবেদনশীলতা ও মালিকানাই মূল- এই নীতিতে সব বক্তা একমত পোষণ করেন।

জলবায়ু অর্থায়নের টেকসই মূল্যায়নের জন্য শুধু অনুদানকে প্রাধান্য না দিয়ে বিভিন্ন বিকল্প উপায় অনুসন্ধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিশেষজ্ঞরা। এসব দেশে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে জ্বালানি দক্ষ উৎপাদন ও ভোগ বৃদ্ধিতে প্রণোদনাভিত্তিক নীতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে বক্তাদের কথায় উঠে আসে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় সংলাপের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপ-মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (জ্যেষ্ঠ) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। তিনি জলবায়ু সংক্রান্ত প্রকল্পগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জানান, সম্প্রতি জাতীয় সংসদে জলবায়ু তহবিলের ওপর ছয়টি অডিট প্রতিবেদন আলোচিত হয়েছে এবং আরও কয়েকটি প্রকল্পের অডিট প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ড. ইফতেখারুজ্জামান জলবায়ু তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্বাচার নিশ্চিতে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং এ খাতে তহবিল প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার ওপর জোর দেন।

এর আগে সোমবার সংলাপের উদ্বোধনী দিনে বক্তারা জলবায়ু তহবিলকে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংগ্রহণমূলক করার ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাধ্যবাধকতা পালনের পাশাপাশি দাতা দেশগুলোর অঙ্গীকার করা ক্ষতিপূরণ ও অনুদান জলবায়ু তহবিলে যথাযথভাবে দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। টিআইবির উদ্যোগে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন বিষয়ে প্রথমবারের মতো ‘ঢাকা ইন্টেগ্রিটি ডায়ালগ’অনুষ্ঠিত হয়।