গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারীরা অপুষ্টিতে রয়েছেন জানিয়ে কক্সবাজার জেলার সিভিল সার্জন আব্দুস সালাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে আসা রোহিঙ্গা শিশু-নারী-পুরুষ যারাই অপুষ্টিতে ভুগছেন। তবে এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে গর্ভবতী নারীদের কথা। নিশ্চিতভাবেই তারা গর্ভকালীন সময়ের সুষম খাদ্য পাচ্ছেন না, বিশ্রাম পাচ্ছেন না; যেগুলো একজন গর্ভবতী নারীর জন্য অত্যাবশ্যক। তাদের দেশে তারা কোনও টিকা নিয়েছিল কিনা সে বিষয়েও আমরা কিছু জানি না। তারওপর এখানে আসার ঝক্কি, থাকা খাওয়ার সমস্যা— সব মিলিয়ে এসব নারীরা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ (ভালনারেবল) অবস্থায় রয়েছেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তারপরও আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, তাদের জন্য সব ধরনের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছি আমরা।’
নিজ দেশে তারা ‘অবহেলিত’ ছিলেন মন্তব্য করেন সিভিল সার্জন আব্দুস সালাম। স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা তাদের জন্য খুব ‘পুওর’ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা সবাই অপুষ্টিতে ভুগছেন এবং গর্ভকালীন কোনও চিকিৎসা সেবা তারা পাননি। আমাদের এখানে ১৬ হাজার গর্ভবতী নারীদের প্রসব কোথায় হবে, তাদের জটিলতাগুলো কী করে সমাধান করা হবে, সেসব বিষয়েও ভাবতে হচ্ছে আমাদের। কারণ প্রতিদিনই রোহিঙ্গা নারীদের কেউ না কেউ সন্তান প্রসব করছেন।’
এদিকে, গর্ভবতী মায়েরা অপুষ্টিতে থাকলে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরও সন্তানদের সেই অপুষ্টির রেশ বহন করতে হয় উল্লেখ করে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ফিস্টুলা সার্জন ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব নারীরা অপুষ্টিতে ভুগছেন এবং এর প্রভাব তাদের সন্তানের ওপর পড়বে। একজন গর্ভবতী নারী পুষ্টিহীনতায় ভুগলে তার গর্ভের সন্তান পর্যাপ্ত খাবার পায় না। ফলে গর্ভাবস্থায় সন্তানটির যেভাবে বেড়ে ওঠার কথা, সেটি হয় না। অন্যদিকে গর্ভবতী নারী পুষ্টিহীনতায় ভুগলে ‘প্রি মেচিউর লেবার’ বা ‘অকাল প্রসবে’র আশঙ্কা থাকে। এতে করে বাচ্চাটি সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় জন্ম না-ও নিতে পারে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপুষ্টির শিকার নারীদের প্রসবকালীন অল্প রক্তক্ষরণেই বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি তা প্রাণঘাতীও হতে পারে। তাই গর্ভবতী যেকোনও নারীর পুষ্টির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। তারা বলছেন, যেকোনও গর্ভবতী নারীর সুষম খাবার দরকার; সকালে দুই ঘণ্টা, বিকালে দুই ঘণ্টা ও রাতে আট থেকে ১০ ঘণ্টা বিশ্রামের দরকার। কিন্তু এই রোহিঙ্গা নারীরা আট থেকে ১০ দিন পায়ে হেঁটে, নদী পার হয়ে বাংলাদেশে আসছেন। এই সময়ে তাদের না খেয়ে থাকতে হয়েছে। এর প্রভাব তাদের অনাগত সন্তানদের ওপরও পড়বে।
কক্সবাজার জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ডা. পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা এতদিন রাখাইনে অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন— এ কথা সাধারণভাবেই বলা যায়। তারা খাদ্য পাননি, পুষ্টি পাননি, ঠিকমতো গর্ভকালীন টিকা নিয়েছিলেন কিনা, সে বিষয়েও আমরা নিশ্চিত নই।’
এ পরিস্থিতিতে গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারীদের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান পিন্টু ভট্টাচার্য। কিনি বলেন, ‘আমরা গর্ভবতী নারীদের যতটা পারছি ভিটামিন ও আয়রন দিচ্ছি। কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় তাদেরকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হচ্ছে। অপুষ্টির শিকার এসব গর্ভবতী নারীদের উখিয়া ও টেকনাফের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে নিয়ে এসে চেকআপ করানো হচ্ছে।’ গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসার জন্য পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ থেকে ১০টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন-
জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় অনীহা রোহিঙ্গা নারীদের
বিধবা হিন্দু রোহিঙ্গা নারীরা বললেন নির্যাতনের কথা
এতিম রোহিঙ্গা শিশুদের মুখে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরতার কথা