১৯৯২ সালের চুক্তি ভঙ্গ করেছে মিয়ানমার

রোহিঙ্গা (ছবি: ফোকাস বাংলা)মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি মঙ্গলবার তার ভাষণে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়া প্রসঙ্গে ১৯৯২ সালে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির কথা উল্লেখ করেছেন। তবে এই মিয়ানমার নিজেই এ চুক্তি ভঙ্গ করেছে। ১৯৯২ সালের ওই চুক্তির একটি ধারায় বলা ছিল, ‘মিয়ানমারে বসবাসকারীরা যেন বাংলাদেশে পালিয়ে না আসে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে মিয়ানমার সরকার সম্মত হয়েছে।’ তবে মিয়ানমার বারবার এর লঙ্ঘন করে যাচ্ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৯৯২ সালে মিয়ানমার সরকার সম্মত হয়েছিল রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তারা এমন কোনও আচরণ করবে না যাতে করে তারা (রোহিঙ্গারা) বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। অথচ তারা সেই চুক্তি ভঙ্গ করে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে যাতে করে নারী ও শিশুরাও নিরাপদ নয়।’রোহিঙ্গা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

১৯৯২ সালের চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার যে কথা সু চি বলেছেন সে প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১৪ সালে আমরা দুই দেশের যাচাইকৃত দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে বললে তারা (মিয়ানমার সরকার) সম্মত হয়। কিন্তু গত তিন বছরেও এই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে পারেনি।’

মিয়ানমার সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘সুচি তার বক্তব্যে কূটনীতিকদের রাখাইনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু মিডিয়া বা আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাকে সেখানে ঢুকতে দেওয়ার বিষয়ে কিছু বলেননি।’

তিনি বলেন, “মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর প্রধান বলেছেন এটি তাদের ‘অসম্পূর্ণ কাজ’ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এগিয়ে না আসলে সব রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন করা না পর্যন্ত তারা থামবে না।”রোহিঙ্গা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

উল্লেখ্য ১৯৬২ সালে নে উইন সরকার মিয়ানমারে ক্ষমতায় আসলে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান শুরু হয়। ১৯৭৮ সালে প্রথম রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে আসা শুরু করে। এরপর ১৯৯১-৯২ সালে তারা আবার দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করলে দুইদেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার মাধ্যমে ওই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০০৫ সালে রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া মিয়ানমার এককভাবে বন্ধ করে দেয়।

২০১২ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অজুহাতে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু করলে তারা আবার আসা শুরু করে।

২০১৬ সালে তিনটি পুলিশ চৌকিতে আক্রমণের অজুহাতে রোহিঙ্গাদের ওপর ফের নতুন করে নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রায় এক বছর পরে গত ২৪ আগস্ট আবার ২৪ থেকে ৩০টি পুলিশ চৌকিতে হামলার অজুহাতে নতুন মাত্রায় রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। গত প্রায় এক মাসে প্রায় সাড়ে চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

আরও পড়ুন- রাখাইনে শুধু লাশ পঁচা গন্ধ