‘রোহিঙ্গা সংকটের সঙ্গে মিয়ানমারের ইতিহাসও জড়িয়ে আছে’

শিক্ষক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ (ছবি- সাজ্জাদ হোসেন)রোহিঙ্গা সংকটের কারণ আপাতদৃষ্টিতে ভূ-রাজনৈতিক মনে করা হলেও এর পেছনে আরও অনেক কারণ রয়েছে। এই সংকটের উৎপত্তি জাতিগত বিভাজন থেকে। মূলত জাতিগত বিদ্বেষ, জাতিগত ঘৃণা ও জাতিগত নির্যাতন এই সংকটের বড় একটি কারণ। এর বড় আরেকটি কারণ জাতিগভাবে মিয়ানমার রাষ্ট্রের গঠনের ইতিহাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। মিয়ানমারের একটি ইউনিয়ন হওয়ার কথা থাকলেও পরে সেই চেতনা বদলে যায়, মিয়ানমার পরিণত হয় ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে। এই ধর্মও মিয়ানমারের এই সংকটের অন্যতম একটি কারণ।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টায় শুরু হওয়া ‘ভূ-রাজনৈতিক অঙ্কের শিকার রোহিঙ্গা’ শীর্ষক বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকিতে এসব কথা বলেন শিক্ষক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ।
বৈঠকিতে মিয়ানমারের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে চলমান সংকটের সংশ্লিষ্টতা তুলে ধরে আলতাফ পারভেজ বলেন, রাষ্ট্র হিসেবে বার্মার (মিয়ানমারের সাবেক নাম) ঐতিহাসিক যে গঠন, তার মধ্যেও রোহিঙ্গা সংকটের কারণ লুকিয়ে আছে। ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীন হয় অং সানের (বর্তমানে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সু চি’র বাবা) নেত্বত্বে। কিন্তু এই স্বাধীনতা অর্জন তার একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। ওই সময় কাচিং, সাংসহ আরাকানের (রাখাইন রাজ্যের সাবেক নাম) রাখাইন জাতিগোষ্ঠীও এই স্বাধীনতার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। ওই সময় বার্মার একটি ইউনিয়ন হিসেবে গড়ে ওঠার কথা ছিল। বলা হয়েছিল, প্রতিটি জাতি নিজেদের মতো করে স্বাধীনতা পাবে, তাদের জায়গা-জমির হিস্যা পাবে। কিন্তু পরে আর এই চেতনা কাজ করেনি। তখন জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিবাজন তৈরি হয়।’
আলতাফ পারভেজ বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে রোহিঙ্গারাও নিজেদের স্বাধীনতার অধিকার পায়নি। এর একটি কারণ হলো- রোহিঙ্গারা রাজনৈতিকভাবে অসংগঠিত। তারা নাগরিক অধিকার থেকে শুরু করে সব ধরনের অধিকার থেকেই বঞ্চিত। এ জন্যই রোহিঙ্গাদের ওপর এত অত্যাচার-নির্যাতন হয়।’
বৈঠকিতে এই শিক্ষক ও গবেষক বলেন, ‘এই সংকটে ভাষা একটি ইস্যু হলেও মূলত ধর্মও এই নির্যাতন ও জাতিগত নিধনের অন্যতম কারণ। নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে অবশ্যই রাজনৈতিক অধিকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক অধিকার অনেক আগেই খর্ব হয়ে গিয়েছে। কারণ, তাদের রাজনৈতিক প্রার্থী হওয়ার অধিকার খর্ব হয়েছিল। আর এর পেছনের অন্যতম কারণ ছিল ধর্ম।’
রোহিঙ্গা সংকটের সঙ্গে ভূ-রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘এখন এই সংকটে ভূ-রাজনীতিও যুক্ত হয়ে পড়েছে। এর একটি কারণ খনিজ সম্পদ। কিন্তু বাংলাদেশের এই বিষয়ে ভীত হওয়ার কিছু নেই। এখন রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনেক দেশই বাংলাদেশের পাশে এগিয়ে এসেছে।’
বৈঠকিতে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত আছেন শিক্ষক ও গবেষক ড. সলিমুল্লাহ খান, কূটনৈতিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) শাহিদুল হক, দৈনিক ইত্তেফাকের কূটনৈতিক সম্পাদক মাঈনুল আলম ও বাংলা ট্রিবিউনের প্ল্যানিং এডিটর নজরুল কবীর।
মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় বাংলা ট্রিবিউন কার্যালয় থেকে এই বৈঠকি এটিএন নিউজ ও বাংলা ট্রিবিউনের ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন-
‘পরিকল্পনা করেই রোহিঙ্গাদের নিধন করা হচ্ছে’
‘ভূ-রাজনৈতিক অঙ্কের শিকার রোহিঙ্গা’ শীর্ষক বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকি শুরু

‘স্বীকৃতি দেবে না বলেই আদমশুমারি থেকে রোহিঙ্গাদের বাদ দিয়েছে মিয়ানমার’