ইউরোপ থেকে অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরত আনতে চুক্তি স্বাক্ষর

বাংলাদেশ -ইইউইউরোপ থেকে অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরত আনার জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ।
বুধবার নিউ ইয়র্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অভিভাসন বিষয়ক মন্ত্রী দিমিত্রিস আভ্রেমোপোলস এ চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকায় পশ্চিম ইউরোপ অনুবিভাগের মহাপরিচালক খোরশেদ খাস্তগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘আমরা কয়েক মাস ধরে তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরত আনার জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড অফ প্রসিডিওর (এসওপি) স্বাক্ষর করেছি।’
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ওই এসওপি অনুযায়ী একজন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর আগে, তার বিরুদ্ধে সব ধরনের প্রশাসনিক ও আইনগত বিধিবিধান শেষ করতে হবে। এছাড়া, ফেরত পাঠানোর আগে তার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ইউরোপেই নিশ্চিত করতে হবে বলে দু’পক্ষ একমত হয়েছে।’
এ চুক্তির অধীনে কতজনকে ফেরত পাঠানো হবে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘চুক্তির প্রথম ছয় মাস প্রতিমাসে একশ’ জনের বেশি লোককে তারা ফেরত পাঠাতে পারবে না।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘অনিয়মিত সব বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে। আমরা আইনি পদ্ধতির মাধ্যমে সেটি করতে পারবো ।’
কতজন বাংলাদেশি বিদেশে অনিয়মিতভাবে আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এর সঠিক পরিমাণ বলা মুশকিল। কারণ, ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো এখনও আমাদের সেই তথ্য দেয়নি।’
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১৪ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশিদের জন্য প্রায় ২৬ হাজার, ২০১৫ সালে প্রায় ২১ হাজার এবং ২০১৬ সালে প্রায় ২৫ হাজার রেসিডেন্ট পারমিট ইস্যু করেছে।’
কিন্তু ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত মাত্র ৪ হাজার ১০০ পারমিট ইস্যু করেছে বলে তিনি জানান।
অনিয়মিত বাংলাদেশিদের কারণে তারা আমাদের অল্পসংখ্যক ভিসা ইস্যু করছে। এর ফলে বৈধ পথে বাংলাদেশিদের ইউরোপ যাওয়াটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাজ্য বাদে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্য ২৭টি দেশে প্রায় দুই লাখ বৈধ ভিসাধারী বাংলাদেশি অবস্থান করছে, যাদের সেখানে থাকার এবং কাজ করার অনুমতি আছে।
অন্য আরেকটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৬ সালে প্রায় ৮ হাজার ২০০ জন এবং ২০১৭ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার ৫০০ বাংলাদেশি ইতালিতে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১৬ পর্যন্ত প্রায় ১৭ হাজার ৩০০ বাংলাদেশি ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছে এবং এরমধ্যে প্রায় ১১ হাজার ৮০০ আবেদন খারিজ করা হয়েছে। বাকি প্রায় ৬ হাজার আবেদনের অধিকাংশ খারিজ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘খারিজ হওয়া এই আবেদনকারীদের ইউরোপে অবস্থান করার কোনও অধিকার নাই। তাদের নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে সবাইকে ফেরত নিয়ে আসা হবে।’
এদিকে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ইউরোপে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে অনিয়মিত বাংলাদেশিরা দেশে ফেরত আসার জন্য প্রায় ৪, হাজার ৫০০ ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করেছে।