এক টুকরো আলুর তরকারি দিয়ে ছেলেকে নিয়ে ভাত খাচ্ছিলেন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা যুবক জুবায়ের। বাকি তিন সন্তান ঘুমিয়েছে পাশেই। স্ত্রী সাহারা খাতুন পাশে বসে স্বামী-সন্তানের পাতে ভাত-তরকারি তুলে দিচ্ছে। বেশ কয়েকদিন পর পেট ভরে ভাত খাচ্ছে তারা। সোমবার ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের (ডব্লিউএফপি) কার্ড হওয়ায় ২৫ কেজি চাল পেয়েছে পরিবারটি। কয়েকটা দিনের নিশ্চিত খাবারের ব্যবস্থা হওয়ার পরও তৃপ্তি নিয়ে খেতে পারছিলেন না জুবায়ের। কারণ খাবার শেষেই পলিথিনে মোড়ানো আশ্রয়টুকু খুলে ফেলতে হবে তাকে।
জুবায়েরের মতো এখানে আশ্রয় নেওয়া প্রায় সবাই প্রতারিত হয়েছেন স্থানীয় সোনা মিয়া, চান মিয়া আর আব্দুর রহমান নামের তিন ব্যক্তির কাছে। ঈদের তিন দিন পর এই পরিবারগুলো যখন নাফ নদী পেরিয়ে এপারে আসে, প্রথম কয়েকদিন থাকতে হয় রাস্তায়, আশ্রয়হীনভাবে। পরে সোনা মিয়া, চান মিয়া আর আব্দুর রহমান গং তাদের ছোট্ট এই টিলায় ঘর বানাতে বলেছেন। বিনিময়ে নিয়েছেন কারও কাছে তিন হাজার, সাড়ে তিন হাজার আবার কারও কাছে চার হাজার টাকা।
মোহাম্মদ তৈয়ব বলছিলেন, ‘কোনও রকমে প্রাণ হাতে নিয়ে বাবা-মা, ভাই-বোনকে নিয়ে উখিয়ার বালুখালীতে আসি। সঙ্গে কোনও টাকা-পয়সা আনতে পারিনি। কিন্তু স্ত্রীর গলায় একটা সোনার মালা ছিল। টেকনাফে গিয়ে তা বিক্রি করে সেই টাকার একটি অংশ তিনি তুলে দিয়েছিলাম সোনা মিয়ার হাতে। তারপর বাজার থেকে বাঁশ আর পলিথিন এনে ১০ ফুট বাই ৮ ফুট জায়গায় দুটি ঘর বানিয়েছিলাম। এখন জানতে পারছি ওই লোক আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।’
মোহাম্মদ তৈয়ব তার পায়ের কাদা দেখিয়ে জানান, সেনাবাহিনী অস্থায়ী এসব পলিথিনের ছাউনি তুলে নিতে বললে কয়েকজনকে নিয়ে আরও ভেতরের ছোট-বড় টিলাগুলো ঘুরে এসেছেন তিনি। একসঙ্গে এই ১৫৬ পরিবার কোথায় একটু অস্থায়ী আবাস গড়ে তুলতে পারবে, সেই দুঃশ্চিন্তা তার মাথায়। সবাই তাকে নেতা বানিয়েছে। তাই শুধু নিজের জন্যই নয়, বাকি পরিবারগুলোরও একটা ঠাঁইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে তাকে।
সোনা মিয়ার কাছ থেকেই বাঁশ আর বাজার থেকে পলিথিন কিনে আশ্রয় তৈরি করেছিলেন। এখন সেই আশ্রয়টুকু হারাতে হচ্ছে প্রতারণার শিকার হয়ে। পাশে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আবু সিদ্দিকের স্ত্রী বলছিলেন, ‘মানুষের এমন বিপদেও কেউ প্রতারণা করতে পারে?’
বালুখালী ক্যাম্পে সেনাবাহিনীর যেসব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন তাদের মধ্যে একজন বলছিলেন, ‘মানুষের এই দুর্দিনে মানুষ কিভাবে প্রতারণা করতে পারে। আপনারা মিডিয়াতে এসব তুলে ধরেন। সোনা মিয়া, চান মিয়া আর আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে যেন প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়।’ আরেক সেনা সদস্য জানান, তারা নিজেরাও এই তিন প্রতারককে খুঁজছেন। ধরতে পারলে তাদের আইনের হাতে তুলে দেওয়া হবে।