সূত্র জানায়, সিভিল এভিয়েশন অথরিটিকে ভেঙে গঠন করা হবে সার্ভিস প্রোভাইডার সংস্থা ও রেগুলেটরি সংস্থা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এভিয়েশন খাতে রেগুলেটরি সংস্থা কেবল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম তদারকি ও আইন প্রয়োগ করে। তবে বাংলাদেশে এই সংস্থাটি নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বের পাশাপাশি সেবাও দিয়ে আসছে। যদিও ১৯৮৬ সালের আগে বাংলাদেশেও এই দুই ধরনের কাজের জন্য পৃথক দু’টি সংস্থা ছিল।
নতুন করে আবারও দু’টি সংস্থা গঠনে আইকাও থেকে তিন জন পরামর্শক নিযুক্ত করা হয়। তারা এরই মধ্যে একটি খসড়া গাইডলাইন দিয়েছে। আইকাও ও ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) সুপারিশে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এজন্য একটি প্রস্তাব এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে মনে করছে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পৃথক দু’টি সংস্থা বাস্তবায়ন করা হলে দেশের এভিয়েশন খাতের সেবার মান উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। বর্তমানে সিভিলি এভিয়েশন অথরিটি একইসঙ্গে নিয়ন্ত্রক ও সেবাদাতার কাজ করায় সেবার মান শতভাগ নিশ্চিত হচ্ছে না। নিয়ন্ত্রণ সংস্থা একইসঙ্গে সেবাদাতার ভূমিকায় থাকায় জবাবদিহিতাও নিশ্চিত হচ্ছে না। নিজেদের অধীনে থাকা দেশের বিমানবন্দরগুলোর সেবার মানে নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে কোনও পদক্ষেপ নিতে পারছে না সিভিল এভিয়েশন। দীর্ঘদিন ধরে আইকাও-ও রেগুলেটরি ও সার্ভিস প্রোভাইডার দু’টি আলাদা সংস্থার জন্য তাগিদ দিয়ে আসছিল।
সেবাদাতা ও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক হিসেবে আলাদা সংস্থা করলে বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্সগুলো ঠিকমতো আইন মেনে কাজ করছে কিনা, যথাযথ সেবা প্রদান করছে কিনা— সেসব তদারকি ও আইন প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। অন্যদিকে, সেবাদাতা সংস্থা দেশের সব বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা, অপারেশন, প্রকৌশল বিভাগের উন্নয়ন-সংস্কার কার্যক্রম, যোগাযোগসহ সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করবে। জানা গেছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এই দুই ধরনের কাজের জন্য আলাদা দু’টি সংস্থাই কাজ করে থাকে।
এ প্রসঙ্গে সিভিল এভিয়েশনের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন্স) উইং কমান্ডার চৌধুরী এম জিয়াউল কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পৃথক দু’টি সংস্থা করতে আইকাও থেকে ৩ জন পরামর্শক নিযুক্ত করা হয়েছিল। তারা একটি খসড়া গাইডলাইন দিয়েছেন। সার্ভিস প্রোভাইডার ও রেগুলেটরি কার্যক্রম পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে দুই থেকে তিন বছর সময় প্রয়োজন হতে পারে। তবে অন্তর্বর্তী কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আইকাও-এর গাইডলাইন অনুসরণ করা হবে।’
জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল হাসনাত মো. জিয়াউল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আইকাও-এর নির্দেশনা অনুযায়ী সারাবিশ্বেই রেগুলেটরি ও সার্ভিস প্রোভাইডার— দু’টি আলাদা সংস্থা হিসেবে কাজ করে থাকে। যে প্রতিষ্ঠান সেবা দেয়, একইসঙ্গে সেই প্রতিষ্ঠান রেগুলেটরি সংস্থা হলে জবাবদিহিতা নিশ্চত হয় না। এজন্য বাংলাদেশেও দু’টি পৃথক সংস্থা করতে কাজ শুরু হয়েছে। সংস্থাগুলোর জনবল কাঠামো, দায়িত্ব, আইন, অবকাঠামো নির্মাণ এসব বিষয় নির্ধারণে কাজ হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও সেবা প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি। একইসঙ্গে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্স ও বিমাবন্দরের সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রণ সংস্থাও সিভিল এভিয়েশন অথরিটি।