মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প ও এর বাইরে থাকা রোহিঙ্গাদের কেউ যেন দেশের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যেতে না পারে তার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে এইচআইভিসহ দুরারোগ্য সংক্রামক ব্যাধিও ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় কমিশনার সমন্বয় সভার সিদ্ধান্তের আলোকে এ নির্দেশ দেওয়া হয় জেলা প্রশাসককে। জেলা প্রশাসনের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ নজরদারি করবেন বিভাগীয় কমিশনার।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছি। শুধু জঙ্গি তৎপরতায় জড়ানো নয়, যেকোনও ধরনের আশঙ্কা বা ভয় রয়েছে, সেগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। মাঠপর্যায়ে কাজও শুরু করেছি।’ মাঠ প্রশাসনের কাজে সরাসরি মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম কক্সবাজারে অবস্থান করছেন বলেও জানান চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূ্ত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিজেই পর্যবেক্ষণ করছেন। প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিচ্ছেন।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৩৬ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে কক্সবাজারে প্রবেশ করেছে। এছাড়া, আগে থেকেই বিভিন্ন সময় আসা আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে অবস্থান করছে।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী,এসব রোহিঙ্গাদের সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। গত ৯ অক্টোবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, চিকিৎসা কেন্দ্র এবং ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা দলের মাধ্যমে এক লাখ ২৪ হাজার ৮১৮ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে এইচআইভি রোগী চিহ্নিত হয়েছে ১৯ জন। পরদিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সর্বশেষ এইচআইভি রোগী শনাক্ত হয়েছে ২১ জন। সংশ্লিষ্টরা জানান, রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য জরিপ শেষ হলে জানা যাবে কতজন এইচআইভি রোগী রয়েছে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে।
এদিকে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে কিছু লোক ইতোমধ্যেই অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। গত ৯ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘রোহিঙ্গারা জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে তারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। তারা বনায়ন ধ্বংস করছে। সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।’
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূ্ত্রে জানা গেছে, দেশের এক শ্রেণির অসৎ লোকজনের সহায়তায় রোহিঙ্গারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের বাইরেও তাদের পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। টাকার লোভে অনেকেই এ কাজ করতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া, মৌলবাদী গোষ্ঠীর সহায়তায় তাদের জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে ফেলার চেষ্টাও হতে পারে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই মাঠ প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারকে ক্যাম্পের বাইরে থাকা রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করতে ১৫ দিন পর বিভাগীয় কমিটির সভা করে তা পর্যালোচনার নির্দেশ দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
গত বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ‘সেফ জোনে’ রাখার বিষয়ে সরকারের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বিএনপির অবস্থানের সমালোচনা করেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভেকেট কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা ও সন্ত্রাসী কাজে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করতে চায় বিএনপি।’