সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়া ও চীনের নেতিবাচক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া কী বলেছে। রাশিয়া বলেছে তারা কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালা সমর্থন করে। কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট কী– সেটা তো আশা করি পড়েছেন। না পড়ে থাকলে পড়বেন, আমাদের কাছ থেকে নিয়ে নেবেন। কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট যে সমর্থন করছে, সে তো সবকিছুই সমর্থন করছে। আমাদের প্রস্তাবেও আমরা বলেছি এই রিপোর্ট সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া বলেছে আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) উগ্র সন্ত্রাসবাদ ছড়াচ্ছে এবং এর ফলে রাখাইনে স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়ছে। আমরাও আরসা যে কাণ্ড করেছিল তার নিন্দা জানিয়েছি। রাশিয়া আরও বলেছে, বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেটি তারা লক্ষ্য করেছে। এজন্য রাশিয়া তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছে। সেগুলো হলো, প্রথমত, নিরাপদে ফেরত যাওয়া, তারপর হলো তাদের গৃহে ফেরত যাওয়া এবং তৃতীয়ত, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন।
এএইচ মাহমুদ আলী বলেন, রাশিয়া আরও বলেছে তারা দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের প্রস্তাব সমর্থন করে এবং এজন্য যে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়েছে তার যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন সমর্থন করে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশের অবস্থা অনুধাবন করতে পারে এবং তারা মানবিক সহায়তা কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে। বলেছে, যারা আইন ভঙ্গ করেছে তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে রাশিয়া কোথায় মিয়ানমারের পক্ষে গেল। আমাকে বোঝান। বাংলাদেশ তো কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন চাইছে। তাহলে কিভাবে রাশিয়া মিয়ানমারের পক্ষে গেল আর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গেল, এটা তো আমি বুঝতে পারলাম না।’
চীনের অবস্থান
চীনের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চীনের বক্তব্যে কফি আনান কমিশনের রিপোর্টের কথা নেই। চীনের ভাষাটা অন্যরকম।’ তিনি বলেন, কোনও একটি বিশেষ পক্ষকে দোষারোপ করার আগে রাখাইন সংঘাতের ঐতিহাসিক এবং অদ্বিতীয় প্রেক্ষাপট ন্যায্য ও পক্ষপাতহীনভাবে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে চীন।
তিনি বলেন, ‘এখানে ঐতিহাসিক ও অদ্বিতীয় প্রেক্ষাপট এ কথাগুলোর মধ্যে অনেক কিছু আছে। তার মানে হলো, আমি একজন বাঙালি হিসেবে, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও বলতে পারেন, আমি বলতে চাই এটার মানে হলো, বাংলা মানে, এই লোকগুলো পরশুদিন যায়নি ওখানে। যুগ যুগ ধরে যেটা আমরা বলি, ওখানে বাস করছে। ঐতিহাসিক মানে কী। গতকালকের একটা ঘটনা, সেটি তো ঐতিহাসিক বলে না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন বলেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ধৈর্য ধারণ করা এবং মিয়ানমারকে আরও সময় দেওয়া। মিয়ানমার সরকার রাখাইনে সামরিক অভিযান বন্ধের যে পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটি তারা সমর্থন করে। মন্ত্রী বলেন, ‘এটার বাংলা মানে হলো, এটা বন্ধ করতে হবে। ওদের ভাষা অন্যরকম। ওরা অন্যরকমভাবে বলে।’ তিনি আরও বলেন, চীন এই সংঘাতের মূল কারণ খুঁজে বের করে সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে। চীনের বক্তব্যে রাখাইন কথাটি বারবার এসেছে, আলাদা করছে এবং আমরাও তো রাখাইনকে আলাদা করছি।
তিনি বলেন, ‘রাখাইন সমস্যাটা আলাদা। এই যে মূল কারণের কথা বলছে, আমরাও তো মূল কারণের কথা বলছি। কোথায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গেল।’ মন্ত্রী বলেন, আমরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উন্মুক্ত বৈঠক করতে পারিনি, কারণ স্থায়ী সদস্যদের বিরোধিতা ছিল। কিন্তু এখন তো উন্মুক্ত আলোচনা হচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদে।
তিনি বলেন, ‘তাহলে কিভাবে হচ্ছে, বিরোধিতা থাকলে কিভাবে হচ্ছে। আরিয়া ফর্মুলা উন্মুক্ত বৈঠক নয় কিন্তু আরিয়া ফর্মুলার বৈঠক হয়েছে। সেখানে কফি আনানকে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য আমন্ত্রণ করেছে এবং তিনি বক্তব্য দিয়েছেন।’