সোমবার (২৩ অক্টোবর) পদ্মা সেতু নিয়ে সুচিন্তা ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক সেমিনারে সজীব ওয়াজেদ জয় এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সুশীল সমাজকে বিদেশিদের দালাল হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশকে টেনে নামাতে ব্যস্ত। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া নয়, দেশকে ধ্বংস করার জন্য তারা কাজ করেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, ষড়যন্ত্র কোথা থেকে শুরু হয়েছে। ২০০৯ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি, একটি টেলিভিশন চ্যানেল তদন্ত করে বের করে, গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করেছে। সেই টাকার বেশিরভাগই নরওয়ে সরকারের দেওয়া। আমরা আওয়ামী লীগ সরকার তদন্ত করে দেখলাম, একশ’ মিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছিল।’
‘তখন নরওয়ে সরকার চিঠি দিয়ে জানায়,টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। তারা কিন্তু বলে নাই যে টাকা পাচার হয় নাই। তারা শুধু বলেছিল, টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। আসল ঘটনা কী? আসল ঘটনা হলো— একশ মিলিয়ন ডলার চুরি করা হয়েছিল। এটা চুরি। এই টাকার মাত্র ৩০ মিলিয়ন ডলার পরে ফেরত দেওয়া হয়েছিল। বাকি ৭০ মিলিয়ন ডলারের কোনও হিসাব নাই।’
জয় বলেন, ‘পরে খবর প্রকাশ হয়, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ ইউনূস চিঠি লিখেছেন। তাতে বলেছেন, ‘তোমরা কিছু করো। না হলে আমার সর্বনাশ হবে।’ তিনি বলেন নাই, এটা মিথ্যা। তিনি বলেছেন, নরওয়ে সরকার উনাকে চিঠি দিয়েছে। এখানে আমরা বিদেশিরা যেটা বলে, সেটাই বিশ্বাস করতে চাই।’’
অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজকে বিদ্রুপ করে জয় বলেন, ‘‘বিদেশিরা যেটা বলে, সেটাই সত্য। আমরা যেটা বলি, সেটাই মিথ্যা’―এই কথাটি সুন্দর করে বলেন একদল মানুষ, তারা সুশীল। আমাদের সমাজেই এক শ্রেণি আছে, তারা সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়ায়। দেশে তাদের কোনও কাজ নেই; তারা এনজিও করে, সেমিনার করে, বক্তব্য দেয়। এসব এনজিও-সেমিনার কার পয়সায় চলে? বিদেশিদের পয়সায় চলে। এটাই তাদের আয়, তাদের ব্যবসা। তারা বিদেশিদের গোলাম।’’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব সুশীলরা বলবে, ভারতের সঙ্গে পানি চুক্তি হয়েছে কিন্তু পানি আসবে না। পানি আসলে তারা বলবে, পানি তো ঘোলাটে। এরাই এ কথাগুলো বলতে থাকে। কারণ সমালোচনা না করলে তারা বিদেশ থেকে টাকা আনতে পারবে না। সেমিনার করার সুযোগ থাকবে না। তাদের আয় বন্ধ হয়ে যাবে।’
পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গ টেনে জয় বলেন, ‘প্রথম যখন সরকারের কাছে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হলো, তখন বাস্তবতা কী? তখন প্রজেক্ট শুরুও হয়নি। বিশ্বব্যাংক তখনও একটি পয়সাও দেয়নি। যেখানে কোনও টাকাই খরচ হয়নি, সেখানে দুর্নীতি কিভাবে সম্ভব? এ প্রশ্ন তোলা হলে তারা বললো, দুর্নীতি না, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।তখন আমরা তাদের কাছে দুর্নীতির তথ্য চাইলাম। এই তথ্যের কথা আপনারা সবাই জানেন। একটি ডায়েরির এক পৃষ্ঠা। কোনও চিহ্ন নেই এটা কোথা থেকে এসেছে। এটা তো আমিও জানাতে পারি। এর তো অথেনটিসিটি প্রয়োজন। কিন্তু কিচ্ছু ছিল না। তখন বিশ্বব্যাংকের তদন্তকারী ওকাম্পো। তিনি দুদকের চেয়ারম্যানের অফিসে বসে অনেক আলোচনা করলেন। তার কাছে বারবার তথ্য চাওয়া হলো। কিন্তু তিনি ওই এক ডায়েরির পৃষ্ঠা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারলেন না।’
‘দুদকের চেয়ারম্যানের অফিসে বসে ওকাম্পো জোর গলায় দাবি করলেন, মন্ত্রী আবুল হোসেন ও উপদেষ্টা মশিউর রহমানকে আজই গ্রেফতার করতে হবে। দুদকের চেয়ারম্যান বললেন, এই তথ্য দিয়ে তো একজন মন্ত্রী ও উপদেষ্টাকে গ্রেফতার করতে পারি না। এটা সম্ভব না। এখানে কোনও মামলা নেই। কিন্তু ওকাম্পো এমনভাবে দুদকের চেয়ারম্যানকে হুকুম করেন, যেন দুদকের চেয়ারম্যান তার গোলাম। সেই ওকাম্পোর বিরুদ্ধে এখন দুর্নীতির মামলা চলছে।’
এসব উদাহরণ টেনে জয় বলেন, ‘এই যে আমাদের বিদেশিদের ওপর বিশ্বাস, বিদেশিরা বললেই সত্য— এটা কোথা থেকে তৈরি হয়েছে? পঁচাত্তরের পরই একটি সমাজ দেশকে টেনে নামানোর জন্য কাজ করতে শুরু করে। এই যে মোহাম্মদ ইউনূস, তিনি কি দেশ সম্পর্কে একটি ভালো কথাও বলেছেন? একটি কথাও বলেন নাই। সুশীল সমাজের যাদের নাম সবসময় শুনে থাকি, তাদের মুখে কোনোদিন বাংলাদেশের প্রশংসা শুনেছেন? না, তারা কেবল সমালোচনা করেন। তারা বলেন, পানি আসবে না। পানি আসলে বলবেন, পানি ঘোলাটে। তাদের লক্ষ্য, নিজের দেশকে টেনে নামাতে হবে। দেশপ্রেম তো দূরের কথা, তারা নিজের দেশকে ধ্বংস করতে ব্যস্ত। বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে টেনে নামাতে ব্যস্ত।’
‘কিন্তু অক্সফোর্ড থেকে পড়ালেখা করা বাবুরা, যারা বাংলাদেশে জন্ম নিয়েও ইংরেজি অ্যাকসেন্টে বাংলা বলে, তারা কিন্তু বলেছিল, পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে করলে অর্থনীতির ওপর চাপ পড়বে। তারা কিভাবে বলে এ কথা? আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, বাজেট দ্বিগুণ, তিনগুণ হচ্ছে। এটা আন্দাজে হচ্ছে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বিশ্বের মধ্যে ৩৩তম অবস্থানে আছে। কারণ, আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছি। আর একের পর এক ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করেই যাচ্ছি। ষড়যন্ত্র লেগেই থাকে। এটা রাজনীতির বাস্তবতা যে রাজনীতি করলে সারাক্ষণ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু যাদের সঙ্গে কোনও মানুষ নেই, মানুষ থাকবে না, ষড়যন্ত্রই তাদের একমাত্র পথ। গ্রামীণ ব্যাংকের ইউনূস ওয়ান-ইলেভেনের সময় কী করেছিলেন? সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার পরই লাফ দিয়ে রাজনীতিতে নামলেন। তিনি জানেন, নির্বাচন করলে একটা সিটও পাবেন না। আবার সুশীলদেরও লোভ আছে। তারা মনে করে, তারা সুশিক্ষিত। এত সুন্দর ইংরেজি বলে, বিদেশিদের সঙ্গে তাদের অনেক খাতির। কিন্তু মনে রাখতে হবে, মানুষের ভালোবাসা ছাড়া ক্ষমতায় আসা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর থেকে স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলেই আসছে। এটা আগে মোকাবিলা করা হতো না। কিন্তু যখনই একের পর এক মিথ্যা প্রচার চলতে থাকে, তখন মানুষ তা বিশ্বাস করতে শুরু করে। তাই সত্যকে তুলে ধরতে হবে সবার সামনে।’
জয় বলেন,‘সৎ থাকলে সুবিধা আছে। আমি তার কথা, তার ভঙ্গিকে হাসি দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। সৎ থাকলে কারও কাছে কিছু পাওয়ার থাকে না। এই পর্যায়েও ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আজ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান।’
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, আমরা বাঙালি জাতি। যুদ্ধ করে, লড়াই করে, ৩০ লাখ শহীদের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এত বছরের এত ষড়যন্ত্রের পরও গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, ১৭ সেপ্টেম্বরের বোমা হামলা পেরিয়ে আমরা এই পর্যায়ে এসেছি। সারাবিশ্বে এখন বাংলাদেশের প্রশংসা। আমি সবাইকে বলতে চাই, নিজের দেশের ওপর আত্মবিশ্বাস কখনও হারাবেন না। বিদেশিদের কথা ছাড়া, বিদেশিদের সার্টিফিকেট ছাড়াই আমরা চলতে পারি। আমরা তাদের কারও চেয়ে কম নই।