‘সন্তান লালন-পালনে এখনকার অভিভাবকরাও অনেকখানি অসহায়’

মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তাজুল ইসলাম (ছবি- নাসিরুল ইসলাম)‘৩০-এর দশকে দশকে ইউরোপে অভিভাবকরা তাদের ভবনের পাশে একটি বাক্স রেখে সেটার মধ্যে সন্তানদের রাখত। তারা মন করত, সন্তানদের মুক্ত বাতাসে রাখতে পারছে তারা। সন্তান আকাশও দেখছে, ওই বাক্সে নিরাপদেও থাকছে; কোথাও যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। আমাদের এখনকার পরিস্থিতি অনেকটা ওই সময়ের মতো। তারা বাইরে কাঁচের বাক্সে সন্তানদের বন্দি করে রাখত, আমরা ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে শিশুকে বন্দি করে রাখি। আসলে অভিভাবকদেরও তো সবসময় কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই সন্তানদের লালন-পালনে তারাও অনেকখানি অসহায়। এর পেছনে তথ্যপ্রযুক্তির বহুল ব্যবহারেরও ভূমিকা আছে।’
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) বিকালে বাংলা ট্রিবিউনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘চার দেয়ালে বন্দি শৈশব’ শীর্ষক বৈঠকিতে এসব কথা বলেন মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তাজুল ইসলাম।
বৈঠকিতে এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমাদের দেশের অভিভাবকদের অনেকেই জানি না সন্তানকে কিভাবে লালন-পালন করতে হয়। আসলে সন্তানদের লালন-পালনে তিনটি বিষয় অত্যন্ত জরুরি— গ্রহণ করা বা মেনে নেওয়া ও শিশুর সঙ্গে সম্পৃক্ততা; পরিপক্কতা অর্জনের জন্য যৌক্তিক চাহিদা বা নিয়ন্ত্রণ এবং সন্তানের স্বাধীনতাকেও মূল্যায়নের মাধ্যমে তার সত্তাকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। এই তিনটি বিষয় ব্যালান্স করে আমরা অভিভাবকরা চলতে পারলে সন্তানের বিকাশ ভালো হবে।’
অধ্যাপক তাজুল আরও বলেন, ‘একজন শিশুকে তার নিজের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি শেখাতে হবে। কিন্তু সেই স্বাধীনতা দিয়ে অভিভাবকরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন— এমন নয়। অর্থাৎ, শিশুদের তদারকি করতে হবে, কিন্তু খবরদারি করা যাবে না।’
বৈঠকিতে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি’র সম্পাদক নবনীতা চৌধুরী, সংগীতশিল্পী ও অভিভাবক রাহুল আনন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান এবং বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল।
এটিএন নিউজের মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় বাংলা ট্রিবিউন স্টুডিওতে অনুষ্ঠিত বৈঠকি সরাসরি সম্প্রচারিত হয় এটিএন নিউজে। এছাড়া, বাংলা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ থেকেও বৈঠকি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
আরও পড়ুন-
‘সমাজই শিশুদের বন্দিদশায় ঠেলে দিতে বাধ্য করছে’

‘সন্তানকে আমাদের শৈশবের কাছাকাছি কিছু দিতে চাই’

‘চার দেয়ালে বন্দি শৈশব’ শীর্ষক বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকি শুরু

‘শিশুরা বন্দি জীবনে বেড়ে উঠছে, আকাশ দেখার সুযোগ নেই’

‘শিশুদের চার দেয়ালের পরিবেশটাই কি যথেষ্ট আনন্দদায়ক করে দিতে পারছি?’