বাংলা একাডেমির পুস্তক বিক্রয় ও বিপণন কেন্দ্রের পুরনো ভাঙাচোরা ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। সাত মাস আগে এখানে তৈরি হয় অত্যাধুনিক ড. মুহম্মদ এনামুল হক ভবন। এর চারদিকে থাই গ্লাস থাকায় দেখতে ঝকঝকে লাগে। কিন্তু ভবনটিতে ঢুকতেই সদর দরজায় চোখে পড়ে অ্যানালগ তালা। তাই সৌন্দর্যটা প্রায় ম্লান মনে হয়। এই পাঁচ তলা ভবনে বেশকিছু বিভাগ থাকলেও সক্রিয় নয় সব। এমনকি বিদেশি অতিথিদের জন্য গেস্ট হাউস থাকলেও তা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না কেবল লিফটের অভাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাংলা একাডেমির নতুন ভবনের নিচ তলায় ঢোকার থাই গ্লাসের দরজার হাতলের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে লোহার শিকল। তাতে লাগানো চাইনিজ তালা। পাশেই পুস্তক বিক্রয় ও বিপণন কেন্দ্র। অন্য পাশের কক্ষজুড়ে রাখা ছাপাখানার কাগজ। এই দরজার সামনেও ঝুলছে লোহার শিকল ও একটি বড় তালা।
নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলার একপাশে ক্যান্টিন, অন্য পাশে অগ্রণী ব্যাংকের বাংলা একাডেমি শাখা। আর বাকি অংশে লেখক ক্লাব। ক্যান্টিনটি স্বপ্ন ক্যাটারিং নামে একটি হোটেল প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া হয়েছে।
ভবনের তৃতীয় তলায় বিক্রয়, বিপণন ও মুদ্রণ কেন্দ্রের প্রশাসনিক অফিসে বসেন এগুলোর কর্মকর্তারা। এই তলার অন্য একটি পাশ পুরোপুরি খালিই পড়ে আছে। চার তলার এক পাশে বিক্রয় ও বিপণন কেন্দ্রের উপ-বিভাগ, যেখানে ওই বিভাগের কর্মকর্তারাই বসেন।
ভবনটির পঞ্চম তলা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল বইমেলায় আগত বিদেশি লেখক ও অতিথিদের থাকার জন্য। কিন্তু লিফট না থাকার কারণে ওই গেস্ট হাউস ব্যবহার হয় না বললেই চলে। বিদেশি অতিথিরা এলে তাদেরকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও গেস্ট হাউসে।
ভবনটি পাঁচ তলায় সীমাবদ্ধ রাখার কারণ জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বহুতল করলে আকাশ থেকে তাকালে নাকি খারাপ দেখাতো। তাই সরকার বহুতল ভবনের অনুমতি দেয়নি। আবার তৃতীয় তলার একপাশ খালি পড়ে থাকায় নিচ থেকে ওপরের দিকে সরু করে ভবন তুলতে হয়েছে। এতে কোনও ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের। ভবন নির্মাণের সঙ্গে আমাদের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ড. এনামুল হক ভবনটি বহুতল বানানোর কথা থাকলেও সরকার তা করেনি। ভবনটির পাশেই শহীদ মিনার। বহুতল হলে তা শহীদ মিনারের উচ্চতা ছাড়িয়ে যেত। এ কারণে পাঁচ তলাতেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে ভবনটি।’
ভবনটি নির্মাণের সময় অর্থের অভাবে লিফট স্থাপন করা যায়নি বলে জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক। এ কারণে পাঁচ তলায় বিদেশি অতিথিদের গেস্ট হাউসও ব্যবহারের সুযোগ নেই।