স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, একনেকে পাস হওয়া এই প্রকল্পের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এর পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সরকারের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। আশা করা হচ্ছে, ২০১৭ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২০ সালের ৩০ জুন শতভাগ বাস্তবায়িত হবে।
কী কারণে এমন প্রকল্প সরকার হাতে নিয়েছে— জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গ্রামীণ জনগণের জীবনযাত্রা ও অর্থনীতি অধিকাংশই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করতে হলে গ্রামীণ হাটবাজার নির্মাণ জরুরি। গ্রামাঞ্চলে হাটবাজারের পূর্ণ সুবিধা থেকে গ্রামীণ কৃষক ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীরা তেমন সুযোগ পান না। বর্তমান বাজার ব্যবস্থায় কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ সুবিধার অভাবে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে স্বল্প মূল্যে উৎপাদন স্থলেই বিক্রি করতে বাধ্য হন।
অন্যদিকে স্থায়ী অবকাঠামো না থাকায় গ্রামীণ বাজারে মালামালের সরবরাহ অপ্রতুল থাকায় ভোক্তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বেশি দাম দিতে হয়। ৪ থেকে ১০ হাজার বর্গফুটের বাজার নির্মাণসহ অন্যান্য ভৌত সুবিধা দেওয়া গেলে কৃষি ও অকৃষি পণ্যের সহজ বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কৃষক প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে তার পণ্য বিক্রয় করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ভোক্তারাও প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সহজে ও ন্যায্য মূল্যে কেনার সুবিধা পাবেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ৪৯১টি উপজেলার প্রতিটিতে কমপক্ষে একটি করে চারতলা বিশিষ্ট বাজার তৈরির মাধ্যমে মোট ৫২০টি গ্রামীণ বাজার তৈরি করা হবে। প্রতিটি বাজারের আয়তন হবে কমপক্ষে চার হাজার বর্গফুট, সর্বোচ্চ ১০ হাজার বর্গফুট।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার ২নং সোহাগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি সরকারের একটি নতুন উদ্যোগ। এর ফলে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ব্যবসা-বাণিজ্যে উৎসাহিত হবে। এতে গ্রামীণ অর্থনীতি বিকশিত হবে। গ্রামের আর্থসামাজিক অবস্থারও পরিবর্তন হবে।’ পণ্য কেনা-বেচার ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলেও মনে করেন আব্দুর রশিদ।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকার সারাদেশের গ্রামীণ হাটবাজারে চার তলা কমপ্লেক্স নির্মাণ করবে। এর মধ্যে নিচতলায় থাকবে কাঁচাবাজার। আর দ্বিতীয় তলা বরাদ্দ দেওয়া হবে নারী উদ্যোক্তাদের। সরকারের এ উদ্যোগ নারী উদ্যোক্তাদের আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।’ মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী প্রায় ছয় কোটি তরুণ-তরুণী রয়েছে। এর এক-তৃতীয়াংশই নারী। তাদের মাত্র ১০ ভাগ ব্যবসায় সম্পৃক্ত। এই হারকে ৫০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া গেলে দেশের উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার নারীবান্ধব সরকার। এসএমই খাতে নারী উদ্যোক্তা তৈরি করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই উদ্যোগও তারই একটি অংশ।’