মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর নৃশংস সহিংসতার শিকার হয়ে ২৫ আগস্টের পর থেকে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। তাদের অনেকেরই স্বজনরা অবস্থান করছেন মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে। তাদের কাছে যেতেই বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে রোহিঙ্গারা।
সাজাপ্রাপ্ত পাঁচ রোহিঙ্গা নারীর দু’জন তৈয়বা বেগম ও ছেনুয়ারা বেগম। পাসপোর্ট করতে গিয়ে তৈয়বা নিজের পরিচয় দেন উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের রুমখাঁপালং গ্রামের অলি আহমদের মেয়ে হিসেবে। আর ছেনুয়ারা নিজের পরিচয় দেন একই গ্রামের বাইলা বেগমের মেয়ে হিসেবে। এছাড়া টেকনাফ শামলাপুর গ্রামের আজহার আলম ও মৃত নূর জাহানের মেয়ে পরিচয়ে রুজিনা আক্তার, রামু উপজেলার নাসিরপাড়া গ্রামের ছৈয়দ আকবর ও হোসনে আরা বেগমের মেয়ে পরিচয়ে পাসপোর্ট করার চেষ্টা করেন রাজিয়া বেগম।
কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আবু নাঈম মাসুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র নকল করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে বাংলাদেশি পরিচয়ে পাসপোর্ট পেতে করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা এসব সামাল দিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তবে রোহিঙ্গারা যেন কোনোভাবেই বাংলাদেশি পরিচয়ে পাসপোর্ট করতে না পারে, সে বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি।’
নাঈম মাসুদ আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আত্মীয়-স্বজন অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। তাদের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই এখানকার রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে সহযোগিতা করছে এক শ্রেণির দালাল। আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র হুবহু নকল করে তাদের পাসপোর্ট অফিসে পাঠানো হচ্ছে। তবে ভুয়া এনআইডি শনাক্ত করতে আমরা ব্যাপক ব্যাপক যাচাই-বাছাই করে থাকি। ফলে সহজে কোনও রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পরিচয়ে পাসপোর্ট পাবে না।’
পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজোয়ান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যেন কোনোভাবে পাসপোর্ট করতে না পারে, সেজন্য সারাদেশে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরাসরি সাক্ষাৎকার না নিয়ে কাউকে পাসপোর্ট দেওয়া হবে না। আমাদের অফিসাররা এখন পাসপোর্ট অফিসের ডেস্কে বসছে। এজন্য অনেকে ধরাও পড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাসপোর্ট ফরম জমা হওয়ার পর পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন জমা হতে হয়। পুলিশ কিন্তু স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানাসহ সব জায়গাতে গিয়ে তদন্ত করছে। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া না গেলে আমরা কাউকে পাসপোর্ট দিচ্ছি না। এ ধরনের অনেক পাসপোর্ট ফরম আমাদের অফিসে জমা পড়ে আছে।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আফরোজুল হক টুটুল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হওয়ার পর থেকেই কক্সবাজার জেলা পুলিশ সতর্ক রয়েছে। আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনও রোহিঙ্গা যেন পাসপোর্ট করতে না পারে, সেজন্য গোয়েন্দা বিভাগকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনও রোহিঙ্গা যদি পাসপোর্ট ফরম পূরণ করেও থাকে, তাহলে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে সেগুলো ধরা পড়ছে।’