আমাদের জুটি ভেঙে গেছে: সাঈদ খোকন

আনিসুল হক স্মরণে অশ্রুসিক্ত মোহাম্মদ সাঈদ খোকন (ফাইল ছবি)ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র (ডিএসসিসি) মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছেন, ‘আমাদের একটা জুটি ছিল। তা ভেঙে গেছে। আর কেউ আমাকে কখনও বড় ভাইয়ের মতো পরামর্শ দেবেন না। আজ থেকে আমি বড় একা হয়ে গেলাম।’ শনিবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে বনানীর ৩২ নম্বর সড়কে ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হকের মরদেহ দেখতে এসে কথাগুলো বলেন তিনি।
সাঈদ খোকন আরও বলেন, ‘আনিসুল হক সবসময় আমার পাশে বড় ভাই হিসেবে ছিলেন। এখন আমার কাছে সবকিছু অন্ধকার মনে হচ্ছে। আমি একা হয়ে গেছি। আমরা উভয়ে মিলে আধুনিক ঢাকা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম। অনেক কাজও করেছি। স্বপ্নও দেখেছি। জানি না ভবিষ্যতে সেই স্বপ্নের কী হবে।’
এর আগে শনিবার দুপুর পৌনে ১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনিসুল হকের মরদেহ বহনকারী বিমান অবতরণ করে। তারপর সরাসরি বনানীর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।
শনিবার বিকাল ৩টায় আনিসুল হকের বনানীর বাসা থেকে আর্মি স্টেডিয়ামে আসে মরদেহ। এখানে বাদ আসর তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিশিষ্টজন ও পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও লাখো মানুষ এতে শরিক হন।
আর্মি স্টেডিয়ামে মরহুমের প্রতি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হয়। এর আগে দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে প্রয়াত মেয়রের মরদেহ দেখতে তার বাসায় যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আনিসুল হকের স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনদের সমবেদনা জানান তিনি।

লন্ডনে সাড়ে চার মাসেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে (লন্ডন সময় বিকাল ৪টা ২৩ মিনিট) লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আনিসুল হকের মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। শুক্রবার লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক জামে মসজিদে জুমার নামাজের পর তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

আনিসুল হকের বাড়ি নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায়। ১৯৫২ সালের ২৭ অক্টোবর ফেনীর সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। বর্তমান সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক তার ছোট ভাই।

আশির দশকে উপস্থাপক হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন আনিসুল হক। পরে তৈরি পোশাক খাতের সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন তিনি। এরপর বিভিন্ন সময়ে বিজিএমইএ, এফবিসিসিআই ও সার্ক চেম্বারের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।

আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাদের সংসারে এসেছে চার সন্তান। ছোট ছেলে মো. শারাফুল হক ২০০২ সালের ৭ এপ্রিল মারা যান। বাকি তিন সন্তানের মধ্যে ছেলে নাভিদুল হক মোহাম্মদী গ্রুপের পরিচালক, মেয়ে ওয়ামিক উমায়রা ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনে কাজ করছেন। তানিশা হক সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন।
আরও পড়ুন-

কাঁদলেন সাঈদ খোকন