গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আসছেন পাইলটরা

ককপিটে বসা পাইলটসরকারি-বেসরকারি এয়ারলাইন্সে কর্মরত দেশি পাইলটদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া বিমানবন্দরে কর্মরত এয়ারলাইন্সগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং যাদের বিমানবন্দরে যাওয়ার পাস রয়েছে তাদের তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় ও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। তবে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর পাইলটরা আওতামুক্ত থাকবেন।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল হাসনাত জিয়াউল হক বলেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে এয়ারলাইন্সগুলোর পাইলট ও কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব তথ্য নিয়ে ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। এটা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’

সিভিল এভিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরামর্শে বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ৩০ অক্টোবর জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফার্স্ট অফিসার সাব্বির এমামসহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

ককপিটর‌্যাব জানিয়েছে, উড়োজাহাজ নিয়ে নাশকতার পরিকল্পনা ছিল সাব্বিরের। এ ঘটনার পর পাইলটসহ বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট  সবার তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

একটি  নির্ধারিত ফরমে ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি এয়ারলাইন্সের পাইলটদের পাশাপাশি হেলিকপ্টার সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পাইলটদের তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এছাড়া কো-পাইলট, কেবিন ক্রু,  প্রকৌশলী, বিমানবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী  এবং বিমানবন্দরে প্রবেশের জন্য  যাদের সিভিল এভিয়েশনের পাস রয়েছে তাদের তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহের ফরমে পারিবারিক ও শিক্ষা জীবনের তথ্য ছাড়াও সম্পদের বিবরণ, ব্যাংক হিসাব নম্বর, আত্মীয়-স্বজনের বিবরণ, আত্মীয়-স্বজনদের পেশা, রাজনৈতিক মতাদর্শসহ বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় গিয়ে গোয়েন্দারা তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করছেন বলেও জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইন্সের পাইলটদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা)এর সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন সাজ্জাদুল হক  বলেন, ‘আমাদের জন্য তথ্য সংগ্রহের এ প্রক্রিয়া নতুন নয়। আমরা যখন চাকরিতে যোগদান করি তখনই এসব তথ্য দিয়ে পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়। তবে সেসময় এত তথ্য সংগ্রহ করা হতো না। ফলে তথ্য দিতে পাইলটদের আপত্তি থাকার কোনও কারণ নেই। নিরাপদ কর্ম পরিবেশের নিশ্চয়তা সবাই চায়।’

বিমানের ককপিট

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পাইলট বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্য তথ্য দিতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। তবে এটাও নিশ্চিত করা জরুরি যে, এসব তথ্য যেন সুরক্ষিত থাকে। একইসঙ্গে তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া যেন ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না করে। এতে পাইলটসহ সবার মধ্যে একটি অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হবে। তথ্য যাচাইয়ের সময় পাইলটদের পরিবারের সদস্যরা যেন হেনস্তার শিকার না হয় সে ব্যাপারেও সজাগ থাকা উচিত।’

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আসিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সব কিছুর ওপরে নিরাপত্তা। নিরাপত্তার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে স্বস্তিতে কাজ করতে পাইলটদের মানসিক প্রশান্তি প্রয়োজন। এমন কোনও পরিস্থিতি সৃষ্টি করা ঠিক হবে না যাতে তাদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়।’

প্রসঙ্গত, গত ৪ সেপ্টেম্বর মিরপুরের দারুস সালাম থানার বর্ধনবাড়ি এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব। ওই ভবনের পঞ্চম তলায় জঙ্গি আব্দুল্লাহ, তার দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও দুই সহযোগী ছিল। সেই ভবনের মালিক ছিলেন বিমানের ফার্স্ট অফিসার সাব্বিরের এমামের বাবা হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদ। জঙ্গিদের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে সাব্বিরের বাবা ও নৈশ প্রহরী সিরাজুল ইসলামকেও আটক করে র‌্যাব। সাব্বির বিমানের বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের ফার্স্ট অফিসার ছিলেন। বিমান নিয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করার অভিযোগে তাকে ৩০ অক্টোবর গ্রেফতার করে র‌্যাব। একই সঙ্গে সাব্বিরের মা সুলতানা পারভীন, মামাতো ভাই আসিফুর রহমান আসিফ ও চায়ের দোকানদার আলমকেও গ্রেফতার করা হয়।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন