নির্বাচনের খবর নেই, ডাকসু ভবন ১৮ তলা


ডাকসু
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) কার্যক্রম না থাকলেও ডাকসু ভবনটি ঠিকই ১৮ তলা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সুউচ্চ ভবন তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে গত ২৭ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী এই ছাত্র সংসদটির নির্বাচন দেওয়ার কোনও খবর নেই।

ঢাবি ছাত্রলীগ প্রশাসনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও কার্যক্রমহীন ডাকসুর জন্য সুউচ্চ ভবন নির্মাণকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করছে ছাত্রদল এবং বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্বাচন হলেও বর্তমান ভবনে ডাকসুর কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব নয়। এজন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বৃদ্ধির কারণে সময়ের প্রয়োজনে ১৮ তলা ডাকসু ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ডাকসুর বর্তমান দ্বিতল ভবন ভেঙেই ওই স্থানে নতুন ভবনটি নির্মাণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি করেছে, নতুন ভবন নির্মাণে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি পেয়েছেন। সরকারি অর্থায়নে এই ভবনে নির্মাণে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছে। নকশা প্রণয়ন ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে একনেকে পাস করিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভবন নির্মাণে আগ্রহী হলেও ছাত্র সংগঠনগুলো ভবনের আগে ডাকসু নির্বাচন চেয়েছে। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত ভবনের বিষয়ে তাড়াহুড়া না করে আগে ডাকসু নির্বাচন দেওয়া। তাদের ভাষ্য হচ্ছে, যেখানে ডাকসুর কোনও কার্যক্রমই নেই, সেখানে এই সুউচ্চ ভবন দিয়ে কী হবে?

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন হলে বর্তমান ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। কারণ, আগে ছিল ৬-৮ হাজার ছাত্র। এখন আমাদের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৪০ হাজার। এত ছাত্রের জন্য তো অনেক বড় স্পেস দিতে হবে। সেই চিন্তা করে আমরা এ ভবনটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। সেখানে ১৮ তলা ভবন করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবন তৈরিসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা এখন ভবনের প্রাথমিক কাজ শেষ করেছি। এরপর এটি পরিকল্পনা কমিশন হয়ে একনেকে পাঠানো হবে, সেখানে অনুমোদনের পর ভবন তৈরির কাজ শুরু হবে। পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হতে আরও সময় লাগবে।’

প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যে জন্য ভবন, সেই ডাকসুর তো কোনও কার্যক্রম নেই। তাহলে ভবন তৈরি করে কী হবে? শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে নির্বাচনের দাবিতে। সেখানে নির্বাচন না দিয়ে নতুন ভবন তৈরির পরিকল্পনা নির্বাচনের দাবিকে আড়াল করতেই করা হচ্ছে কিনা, জানি না।’

ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইভা মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত আগে কিভাবে ডাকসু নির্বাচন করা যায় তার পরিকল্পনা করা। ডাকসু নির্বাচন না হওয়ার কারণে ডাকসু ভবনের কোনও কার্যকারিতা নেই। আমাদের দাবি, আগে ডাকসু নির্বাচন। তারপর অন্যকিছু।’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে  বলেন, ‘দেশে তো এখন উন্নয়ন বাণিজ্য চলছে। যেখানে ডাকসুর কোনও কার্যক্রম নেই, সেখানে নতুন ভবন তৈরির বিষয়টি খুবই হাস্যকর। আমরা আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সব রাজনৈতিক সংগঠনের সহ-অবস্থান চাই। এরপর ডাকসুসহ অন্যসব ছাত্র সংসদের নির্বাচন চাই।’     

তবে প্রশাসনের উদ্যোগকে সমর্থন জানাচ্ছে ছাত্রলীগ। সংগঠনটিন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা অবশ্যই ডাকসু নির্বাচন চাই। কিন্তু বর্তমান ডাকসু ভবনের অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়। তাই নতুন ভবন তৈরির প্রয়োজনীয়তা আছে।’ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মফিজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমান ডাকসু ভেঙে নতুন ভবন তৈরির প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন।’ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা ডাকসুর যাত্রা শুরু হয় ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে। ১৯২৪-২৫ সালে প্রথম ডাকসুর ভিপি মনোনীত করা হয়। প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৫৩ সালে। এরপর থেকে এ পর্যন্ত ৩৬ বার নির্বাচন হয়। স্বাধীনতার পর ডাকসু নির্বাচন হয় ছয় বার। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালের ৬ জুন। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে ডাকসুর নেতৃত্বে এসেছিলেন আমান উল্লাহ আমান ও খায়রুল কবির খোকন।