তীরশিলং জুয়া কী, কারা ছুড়ে দিচ্ছে তীর?

তীরশিলং পর্ব-২১৯৯০ সালে সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা ভারতের শিলং ও গৌহাটি থেকে চালু হয় তীর খেলাটি। গত ২৮ বছরে এই খেলাটির নাম এখন স্থানীয় ভাষায় ‘তীরশিলং’। শুরুর দিকে এই খেলার প্রচলন ছিল কেবল ভারতের কোলঘেঁষা সিলেটের সীমান্তবর্তী কয়েকটি এলাকার মানুষদের মধ্যে। কথাগুলো বলছিলেন গোয়াইনঘাটের সাংবাদিক আলী হুসেন। তার ভাষ্য, সরাসরি সীমান্তে বসেই টাকার বিনিময়ে খেলায় অংশ নিতেন কিছু মানুষ। এরপর ধীরে ধীরে এই খেলা ছড়িয়ে পড়ে সিলেটের বিভিন্ন প্রান্তে।

জাফলংয়ের তীরশিলং জুয়ার এজেন্ট রাজ মোবাইল ফোনে (ভুয়া নাম ব্যবহার করে থাকেন তিনি, ফেসবুকে তিনি সুলতান খান নামে রয়েছেন) বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ভারত থেকে শিলংয়ের জুয়াড়িরা দেশীয় এজেন্ট নিয়োগ করে দেয়। এতে বাড়তে থাকে সাধারণ ক্রেতার সংখ্যা। ইন্টারনেটে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জুয়া খেলার সুযোগে সাধারণ মানুষেরা এতে যুক্ত হতে শুরু করে।

তীরশিলং কী

আলী হুসেন ব্যাখ্যা করেন, দেশীয় এজেন্টদের মাধ্যমে ১-৯৯ পর্যন্ত নম্বর বিক্রয় করা হয় যেকোনও টাকায়। যত মূল্যে বিক্রি হবে, তার ৭০ গুণ লাভ দেওয়া হবে বিজয়ী নম্বরের গ্রাহককে। অর্থাৎ, ১ টাকায় পাওয়া যাবে ৭০ টাকা। তিনি জানান, ১৯৯০ সালের দিকে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী জাফলং এলাকায় খেলাটির প্রচলন হয়। স্থানীয় ভাষায় টুকা খেলা, নম্বর খেলা, বোটকা খেলা, ভাগ্য পরীক্ষা খেলা, ডিজিটাল নম্বর খেলা ইত্যাদি নামেও পরিচিত এই জুয়াটি।

জাফলংয়ের এজেন্ট রাজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তীর খেলা সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে। দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে নম্বর কিনে আসতে হয়। সপ্তাহে ছয় দিন খেলাটি পরিচালিত হয়। ফলাফল ঘোষণা করা হয় প্রতিদিন বিকাল ৫টায়। ভারতের ছুটির দিন রবিবারে খেলাটি হয় না।’

সাংবাদিক আলী হুসেন বলেন, ‘তিন স্তরের লোকদের মাধ্যমে তীরশিলং খেলাটি হয়। দিনে দু’বার ড্র হয়। একবার বিকাল সাড়ে ৪টায়, দ্বিতীয় ড্র হয় সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে। এতে ভারতের শিলং থেকে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রতিদিনের শুরুতেই অনেকগুলো কমন নম্বর দেওয়া হয়। এই নম্বরগুলোকে কেন্দ্র করেই সারাদিন ছুটে বেড়ান তীরশিলং খেলতে আগ্রহীরা।’

আলী হুসেন আরও বলেন, ‘নির্দিষ্ট এজেন্টরা মুহুরীর (সংগ্রাহক) মাধ্যমে গ্রাহক সংগ্রহ করে। মুহুরীর থ্রো ছাড়া কোনও ব্যক্তিই সরাসরি তীরশিলংয়ে অংশ নিতে পারে না। এক্ষেত্রে যেটি দাঁড়ায়, প্রথমে এজেন্ট, এরপর মুহুরী, এরপর গ্রাহক।’

জৈন্তার দরবস্ত বাজারের এই-চায়ের দোকানটিতে তীরশিলং জুয়ারিদের অবস্থান করে

এ তিন স্তরের বাইরে প্রথম গ্রুপটি ভারতের শিলং থেকে অনলাইনে জুয়াটি ছাড়ে। এরপর একটি অংশ এই জুয়াটি নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশে। যারা সিলেটে জুয়া থেকে আয় করা টাকা সংগ্রহ করে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, যেহেতু গ্রাহকের সরাসরি ওয়েবসাইটে গিয়ে তীরশিলং খেলার সুযোগ কম, সেহেতু প্রথমে নির্দিষ্ট সংখ্যার বিপরীতে গ্রাহককে টোকেনের বিনিময়ে খেলায় অংশ নিতে হয়। এই টোকেন কেনায় একটি ফাঁক রয়েছে। এজেন্টরা নিজেরাই ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট কতগুলো সংখ্যার ওপর বাজি ধরে। সেই বাজির ওপর ভিত্তি করে যে সংখ্যাগুলোর ওপর বাজি আসে, ভারতের শিলংয়ে যোগাযোগ করে পেমেন্ট করে রেজাল্ট আনানো হয় অন্য নম্বরে। পরে যাদের বাজির দর কম, সে গ্রাহকদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

জাফলং বাজারের পান ব্যবসায়ী আজির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিলং বাজারে মামার বাজার নামে একটি স্থানে আছে। সেখানে রহস্যজনক ম্যানেজার আছে একজন। তাকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।’ তার দাবি, এই ম্যানেজারের সঙ্গে বিশ্বস্ত কেউ ছাড়া সাক্ষাৎ করতে পারে না। তার সঙ্গে থাকে কয়েকজন এজেন্ট। এই এজেন্টদের সঙ্গে সাক্ষাৎ মিলে কেবল বিশেষ কয়েকজন খেলোয়াড় বা গ্রাহকের।

জাফলংয়ের ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ স্টোরের মালিক জামাল বলেন, ‘জাফলংয়ে ১০-১২ বছর ধরে এ জুয়া চলে আসছে। সম্প্রতি এই খেলাটি সম্পর্কে জানাজানি হয়।’ বছর দুয়েক ধরে এতে অনেক মানুষ জড়িয়ে পড়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

জুয়া খেলায় অংশ নেওয়া গ্রাহকদের সম্পর্কে জামাল জানান, ‘অনেকে একটিমাত্র সংখ্যায় বাজি ধরে। আবার অনেকে সমপরিমাণ টাকায় টানা ১০টি সংখ্যার ওপরে বাজি ধরে। টাকার হার— এক টাকায় ৭০ টাকা পাওয়া যায়।’ কেউ কেউ ১৫ হাজার পর্যন্ত বাজি ধরে বলেও জানান তিনি।

দোকান মালিক জামাল আরও জানান, পরদিনের জুয়া ধরতে আগের দিন রাত থেকে সিরিয়াল দেওয়া শুরু হয়। এভাবে দিনে সর্বোচ্চ একটি নম্বরের কিছুসংখ্যক মানুষ বিজয়ী হয়। আর বাকি সব নম্বরের টাকা এজেন্টরা নিয়ে যায়।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ধারণা করা হচ্ছে, পুরো সিলেটে দিনে প্রায় ৮০ লাখ থেকে এক কোটি টাকার তীরশিলং বাজি ধরা হয়। কোনোদিন টাকার পরিমাণ আরও বেশি হয় বলে জানান অনেকে। আর এর মধ্যে কেবল কিছুসংখ্যক মানুষই বিজয়ী হয়, বাকিরা নিজেদের লগ্নিকৃত টাকা হারিয়ে দিনের পর দিন জুয়ায় ব্যস্ত থাকে এই আশায় যে, ‘যদি একবার লাইগ্যা যায়’।

গোয়াইনঘাটের সবজি বাজার, প্রতিবেদক

জাফলংয়ের কিছু ব্যবসায়ী ধারণা করছেন, এজেন্টদের মাধ্যমে টোকেন ফি আদায় হয়, এরপর ওই টাকার একটা অংশ থেকে যায় স্থানীয় উদ্যোক্তাদের হাতে। আর জুয়া পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রাপ্ত অর্থ জাফলংয়ে যায় বিকাশের মাধ্যমে, কখনও নগদে। এরপর জাফলং থেকে কিছু ব্যবসায়ী টাকা ডলারে পরিণত করে সীমান্ত দিয়ে শিলংয়ে পাচার করেন। তবে এ বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনও নির্দিষ্ট মাধ্যমকে চিহ্নিত করা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সচেতন মহলও।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়ে মেইলে যোগাযোগ করা হয় শিলং সিটির পুলিশের এসপি স্পিল থামারের সঙ্গে। তার কাছ থেকে কোনও উত্তর আসেনি।

শিলংয়ে বৈধ তীর খেলা

ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে তীর খেলায় বাজি ধরা বৈধ। প্রতিদিন বিকালে শিলংয়ের পোলো গ্রাউন্ডে ৫০ জন তীরন্দাজ একটি লক্ষ্যে তীর ছুঁড়েন। মাত্র পাঁচ মিনিটে তারা ন্যূনতম ৩০০টি ও সর্বোচ্চ এক হাজার তীর ছুঁড়েন। এরপর পাঁচ জন কর্মকর্তা লক্ষ্যে আঘাত করা তীরগুলো গুণে দেখেন। আঘাত করা তীরের সংখ্যার শেষ দুটি অঙ্ক চূড়ান্ত ফল হিসেবে গণ্য করা হয়। যেমন— প্রথম রাউন্ডে যদি ৭৪৮টি তীর লক্ষ্যে আঘাত হানে তাহলে জয়ী সংখ্যা হবে ৪৮। এই ফলের ওপরই বাজি ধরা হয়। মেঘালয়ে এই বাজির দর ৮০/১। তীরন্দাজরা প্রতিদিন গ্রামীণ এলাকা থেকে আসেন। সারাদিন তীর ছোঁড়ার জন্য তাদের ৩০০-৫০০ রুপি পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। শুরুর দিকে শিলংয়ের মাঠে উপস্থিত হয়ে লোকজন বাজি ধরতেন। পরে তা ভারতের বিভিন্ন শহরসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। একাধিক ওয়েবসাইটে এই ফল প্রকাশ করা হয়। দিল্লি-মুম্বাই থেকেও বাজি ধরা হয়। বাজির সর্বোচ্চ দরের কথা জানা যায়নি। তবে তা অনেক সময় কোটি রুপি ছাড়িয়ে যায় বলে ধারণা করা হয়।

কারা ছুড়ে দিচ্ছে তীর?

২৮ বছরে সীমান্তে নীরবে তীরশিলং খেলা হলেও গত দুই বছর ধরে সিলেটে এটি প্রকাশ্যেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভারতের শিলং থেকে  গোয়াইনঘাট, জাফলং, জৈন্তা সীমান্তের এই জুয়া এখন পুরো সিলেটকেই দিশেহারা করে দিয়েছে। শ্রমজীবী মানুষেরা, বিশেষ করে রিক্শাচালক, জেলে, মাছ ব্যবসায়ী, ড্রাইভার, পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ,মানুষ দিন দিন আসক্ত হয়ে পড়েছেন এই তীরশিলংয়ে। লক্ষ্যণীয়, সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব কমসংখ্যকই তীরশিলং নিয়ে কথা বলতে চাইছেন।

স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, জৈন্তাপুর এলাকায় এজেন্ট হিসেবে আছে রুমিন, মোস্তফা কামাল, জুলফিকার আলী (লেপ-তোষকের দোকানি), আকবর আলী, মুসা, সোহেল আহমদ, আবদুস সোবহান ও আবদুল মালেক। গোয়াইনঘাট এলাকায় আছে মুহাম্মদ আলম, নিজাম উদ্দিন, আলাউদ্দিন, সুভাষ, জলাই, কাজল, নুরুল ইসলাম, বাহার, বক্কর, মান্না, নোমান ও রাজ্জাক।

কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখা গেছে তীরশিলং নিয়ে প্রশ্ন করলেই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন সবাই। সাধারণ মানুষ উত্তর দিতে না চাইলেও কয়েকজন শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী জানিয়েছেন চমকপ্রদ তথ্য। রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিরাও কিছু তথ্য জানিয়েছেন।

সরেজমিন পশ্চিম কাজিরবাজার মাছের আড়ৎ। নগরীর শেখঘাট এলাকায় জিতু মিয়ার পয়েন্ট থেকে সেলফি ব্রিজের নিচে মাছের আড়তে টেবিল রেখেই তীরশিলংয়ের জুয়া খেলা চলে। এই পয়েন্টে খেলা চালায় ১২নং ওয়ার্ড কমিশনার সিকন্দর আলীর ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম।

সিলেট নগরীর পশ্চিম কাজির বাজার মাছের বাজার

স্থানীয়রা জানান, এই ব্রিজের নিচে তীরশিলং খেলাটি অনেকটাই প্রভাব নিয়ে পরিচালনা করেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি একসময় ছিলেন জেলে। সম্প্রতি তীর খেলার কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তার ২৬ দিনের সাজাও হয়েছে।

এ বিষয়ে ১২নং ওয়ার্ড কমিশনার সিকন্দর আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শেখঘাট পয়েন্ট অর্ধেক আমার, পশ্চিম কাজির এক সাইট আমার। সারা সিলেটে তীর খেলা হয়।’ তীরশিলং খেলায় আপনি ও আপনার ভাই জাহাঙ্গীর জড়িত— এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনার সিকন্দর বলেন, ‘আমার ভাই জাহাঙ্গীর আলম জড়িত নয়, এটা ভুল। বাজারে অনেকেই খেলতেছে। বোর্ড চালাইতেছে। আপনার মুখে প্রথম শুনলাম।’

পরে জাহাঙ্গীর আলমের ফোন নম্বর চাইলে তিনি ঘুমে আছেন বলে জানান সিকন্দর আলী। বলেন, ‘ঘুম থেকে উঠলে আপনাকে কল দিতে বলব।’

নগরীর কাজিরবাজার কাঁচাবাজার এলাকাটি পড়েছে কোতয়ালি থানায়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গউসুল হোসেন বললেন, সিকান্দার আলীর দুই ভাই জাহাঙ্গীর আলম ও আসকির, দু’জনেই তীরশিলংয়ে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সাজাও হয়েছে।

ওসি বলেন, ‘তীরশিলং জুয়াটি কঠিন ঝামেলা। গত মাসে পাঁচটা মামলা করেছি। আসামিদের চালান দিয়েছি। এই সেদিনও কাঁচাবাজার থেকে চার জনকে ধরেছি। নাসিম, শরিফসহ আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি। তীরশিলং শহরে ভাইরাস হয়ে গেছে। প্রতিনিয়িত অভিযান করছি। জুয়া আইনে পাঁচটা মামলা দিয়েছি সম্প্রতি। এক মামলায় ২৩ জনের সাজা হয়েছে। ডিসি নর্থ স্যার মরিয়া হয়ে উঠেছেন জুয়াটি বন্ধ করতে। এক জায়গায় বন্ধ করলে আরেক জায়গায় চালু করে। বেশিরভাগ মামলা জুয়া আইনেই হচ্ছে।’

কাজিরবাজার ব্রিজের নিচে তীরশিলং জুয়ার উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর আলম সম্পর্কে ওসি গউসুল হোসেন বলেন, ‘১২নং ওয়ার্ডের কমিশনার সিকন্দর আলীর দুই ভাই। এক ভাই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা আছে। আরেক ভাই আসকিরের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।’ কমিশনার সিকান্দরের বিরুদ্ধে মামলা আছে কিনা— এমন প্রশ্নের উত্তরে ওসি গউসুল হোসেন বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে মামলা নেই; কমিশনার তো। সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাই নাই।’

ওসির দেওয়া তথ্য সম্পর্কে জানতে ফের যোগাযোগ করা হলে কমিশনার সিকন্দর বলেন, ‘বাজারে বাপ-দাদার জমি আছে, ঘর আছে— পৈত্রিক সম্পত্তি। তো ওই ভাড়া ঘরে কী হয়, কেউ জানে না।’

সিকন্দর আলী সম্পর্কে বিএনপি নেতা ও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিপদ থেকে বাঁচতে অনেকেই দলে নাম লেখায়, দল করে না। দলের নাম বিক্রি করতে পারে।’

তীরশিলং জুয়ার পেছনে প্রভাবশালীদের নাম এসেছে। এসেছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এক নেতার নামও। কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একজন নেতার ভাগনে, স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা, নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার সহযোগী ছাত্রলীগ নেতা, নগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক এক জনপ্রতিনিধির সন্তানের নাম জানা গেছে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে। তবে তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা বা সুনির্দিষ্টভাবে কোনও অভিযোগ নেই।

সিলেটের উপশহরে তীরশিলং নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগের সাবেক  সদস্য শামীম ইকবাল ওরফে ডাকু শামীম নামে একজন। তার নামে কয়েকটি মামলা রয়েছে সিলেটের কয়েকটি থানায়।

অবশ্য তীরশিলং সম্পর্কে জানা নেই বলে দাবি করেছেন শামীম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই বিষয়ে ভালোভাবে জানি না, এই খেলাই বুঝি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি অন্যায়কে প্রশ্রয় দিই না। আমি লোকাল পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত। জেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য।’

মামলা প্রসঙ্গে শামীম ইকবাল বলেন, ‘মামলা আছে। একটা পলিটিক্যাল মামলা আছে। উপশহরে জামায়াত-বিএনপির প্রভাব বেশি। এটা ষড়যন্ত্র।’

গত জোট সরকারের আমলে মামলা থাকার কথা বললেও শামীম ইকবাল প্রসঙ্গে শাহ পরান থানার ওসি আখতার হোসেন বলেন, ‘এই মাসেই একটি ভাঙচুরের মামলা হয়েছে। ইনভেস্টিগেশন চলছে।’ শামীম প্রসঙ্গে ওসি আখতার বলেন, ‘একজন আসামি হিসেবে ভাবমূর্তি যেমন, তেমন আছে। আরও মামলা আছে, সেগুলো ডক্যুমেন্ট দেখে বলতে হবে।’

তার থানায় তীরশিলং জুয়ার প্রবণতা কেমন, জানতে চাইলে ওসি আখতার হোসেন বলেন, ‘যেটুক পাই, চেষ্টা করি ধরার। সিলেট মেট্রোর এলাকা, আমাদের নজরদারিতে আছে, অনেকে ধরা পড়ছে। অনেককেই সাজা পেয়েছে।’

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, সিলেট নগরীর ঘাঁসিটুলা এলাকায় তীরশিলং নিয়ন্ত্রণ করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতার ভাগনে বলে নিজের পরিচয় দেন। তবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

নগরীর ছড়ারপার এলাকায় তীরশিলং খেলার দেখভাল করেন সিলেট আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার ছেলে। প্রভাবশালী নেতার কাছে দৈনিক ১০ হাজার টাকা জমা দিতে হয় বলে জানান ছড়ারপার এলাকার দুজন তীরশিলং এজেন্ট। এই এলাকায় চাঁদা তোলেন তাঁতীলীগের এক নেতা। তাকেও ফোনে পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তীরশিলংয়ের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত আছে। রাজনীতিবিদদের অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।’

আরও পড়ুন:

শিলংয়ের জুয়ায় দিশেহারা সিলেট

আগামী পর্ব:

প্রাণ গেলো রফিকের, সচ্ছল পরিবার এখন পথে