ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে রাজধানীতে প্রায় ৬০টি খেলার মাঠ ও উদ্যান রয়েছে। কিন্তু এগুলোর কোনোটিই তাদের একক এখতিয়ারভুক্ত নয়। গণপূর্ত অধিদফতর, রাজউক, বন বিভাগ এবং পরিবেশ অধিদফতরও এসব খেলার মাঠ ও উদ্যানের তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
তবে এরই মধ্যে ১৯টি উদ্যান ও ১২টি খেলার মাঠ জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। যদিও এই কাজে সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থাগুলোকে এ ধরনের কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সদস্য সচিব ইকবাল হাবিব বলেন, ‘সব খেলার মাঠ ও খোলা জায়গাগুলো ধীরে ধীরে দখল হয়ে যাচ্ছে। এই শহরে এখন শিশু ও বয়স্কদের জন্য মুক্তভাবে নিঃশ্বাস নেওয়ার কোনও জায়গাই নেই। আর কর্তৃপক্ষেরও এ বিষয়ে কোনও নজর নেই।’
উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত হওয়ার আগে ঢাকা সিটি করপোরশন রাজধানীতে একটি জরিপ চালিয়েছিল। ওই জরিপে দেখা যায়, ঢাকার খেলার মাঠগুলোর বড় একটি অংশই অবৈধ দখলের শিকার কিংবা ভিন্ন কোনও কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পরিস্থিতির কেবল অবনতিই ঘটেছে। অনেক পার্ক ও খেলার মাঠেই নেই ঘাস, শুকনো মৌসুমে এগুলো ধূলায় ভরে যায়, বর্ষার মৌসুমে হয়ে পড়ে কর্দমাক্ত। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব শিশু পার্ক ও খেলার মাঠের ভেতরে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী দোকানপাট। নির্বিচারে সব ধরনের বর্জ্য ফেলায় অনেক মাঠই শেষ পর্যন্ত পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে।
৩৯ শতাংশ মানুষ কখনোই পার্কে যায়নি
ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের ২০১৬ সালের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ঢাকার অধিকাংশ খোলা জায়গা ব্যবহার করছে সরকারি সংস্থা বা বেসরকারি সংগঠনগুলো। ফলে এসব স্থানে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার কমে যাচ্ছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নগরের সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নাগরিক প্রয়োজন মেটাতে পার্ক ও খোলা জায়গা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে দুই সিটি করপোরেশন।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন বলেন, ‘স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের জন্য মাথাপিছু যে পরিমাণ খোলা জায়গা থাকা উচিত, ঢাকা শহরে তা নেই।’ এই খোলা জায়গা সবার জন্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, রাজধানীবাসী ৩৭৪ জন ব্যক্তির মধ্যে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, ৬০ শতাংশ ব্যক্তি কোনও না কোনও সময় কাছাকাছি কোনও পার্কে গিয়েছেন। কিন্তু জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-পঞ্চমাংশ (৩৯ শতাংশ) মানুষই জানান, তারা কখনোই কোনও পার্কে যাননি।
ওই জরিপ থেকে আরও জানা যায়, নারী ও বয়স্কদের মধ্যে পার্কে যাওয়ার পরিমাণ আরও কম। বিশেষত বাজে পরিবেশের কারণেই তারা পার্কে যান না বলে জানিয়েছেন।
এদিকে ৭৩৯ জন ব্যক্তির মধ্যে পরিচালিত আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, ৯১ শতাংশ মানুষেই পার্ক ও খেলার মাঠের বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নতি চান। তাদের দাবি, পার্ক ও মাঠগুলোতে বসার জায়গা, বেঞ্চ ও বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য ছাউনি তৈরি করা হোক। জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা বলেন, বেশিরভাগ পার্কই কোলাহলপূর্ণ এবং এগুলোতে যথাযথ আলোর ব্যবস্থা নেই। এছাড়া এসব পার্কে নেই পানি সরবরাহ, বর্জ্য নিষ্কাশন ও পয়োঃনিষ্কাশন এবং হাঁটার সুযোগ।
(ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত)