দাবি মানার আশ্বাস না পাওয়ায় জোরদার হচ্ছে শিক্ষকদের আন্দোলন

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশনরত শিক্ষকরা (ছবি: ফোকাস বাংলা)বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষকদের আন্দোলন ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। টানা দুই দিন অনশনের পরও সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নিতে কোনও ধরনের আশ্বাস না পাওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকেও মেলেনি সাড়া।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষক অনশনে যোগ দেবেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) থেকে আমরা কয়েক হাজার শিক্ষক অনশন করছি। ৪০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও দাবি মেনে নিতে কেউ আশ্বাস দেয়নি। আমরা আজ (রবিবার) রাতেও শহীদ মিনারে অবস্থান করবো। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’

সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি জানিয়েছেন, শনিবার সকাল থেকে কয়েক হাজার শিক্ষক অনশন শুরু করেন। কনকনে শীতেই শহীদ মিনারে রাতেও অবস্থান নেন প্রায় দুই হাজার শিক্ষক। তাদের অনেকের শীতের পোশাক ছিল না। রবিবার সারাদিনে ৩৮ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ জন। ১৫ জনের মতো শিক্ষককে নেওয়া হয় পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এছাড়া বেশ কয়েকজনকে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণেই স্যালাইন দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে গাইবান্ধার শিক্ষক রকিব শেইখ বলেন, ‘আমরা মানুষ গড়ার কারিগর। আমরা দুই দিন ধরে এত কষ্ট করছি, কিন্তু কারও কোনও টেনশন নেই। কেউ এখন পর্যন্ত আমাদের আশ্বাস দিলো না। প্রায় ৪০ জন অসুস্থ হয়েছেন। তারা বাঁচবে কি মরবে জানি না। সবাই চিকিৎসা নিচ্ছে। আমরা কেউ কেউ কাফনের কাপড় নিয়ে এসেছি। মরে যাবো তবুও দাবি আদায় করে ছাড়বো।’

সহকারী শিক্ষক সমিতির মোট ১০টি সংগঠন মিলে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি মহাজোটের ব্যানারে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন শিক্ষকরা। গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে ন্যায্য দাবি নিয়ে অনশন কর্মসূচিতে আছেন কয়েক হাজার শিক্ষক। এ বিষয়ে সরাসরি প্রধানমন্তীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।

অনশনে থাকা শিক্ষকরা জানান, ১৯৭৩ সাল থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের একধাপ নিচে বেতন পেতেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা। কিন্তু ২০০৬ সালের বেতন কাঠামোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের ব্যবধান বেড়ে যায় আরেক ধাপ। ২০১৪ সালে তা বেড়ে যায় আরও তিন ধাপ। প্রধান শিক্ষকদের গ্রেড উন্নয়ন করলেও সহকারী শিক্ষকদের গ্রেড একধাপও বাড়েনি। তারা বলেন, ‘আমরা যতক্ষণ না সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আশ্বাস পাচ্ছি, ততক্ষণ এই অনশন চলবে।’

শিক্ষকদের এ দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীরউত্তম)। রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকালে শহীদ মিনারে শিক্ষকদের অনশনস্থলে এসে সংহতি জানান তিনি। এ সময় দাবি মেনে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান এই মুক্তিযোদ্ধা।