উদ্দীপন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামলী নাসরিন বলেন, ‘বইয়ে পরিবর্তনটা কেন পরিষ্কার করা হচ্ছে না। হেফাজতিকরণটা কেউ স্বীকার করছে না, করলে তো ব্যাখ্যা করতে হতো। তাও কেউ করছে না। সরকার পক্ষের কেউও বলছেন না যে, নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অনেক কিছুতেই হাত দেওয়া হয়নি। হেফাজতিকরণ পুরোপুরি করা হয়েছে, এই যুক্তি-তর্ক করতে গেলেও টিকবে না। কারণ, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা বিষয়ক কোনও কিছুতেই হাত দেওয়া হয়নি। তারও তো ব্যাখ্যা পাচ্ছি না।’
অন্যদিকে, বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব নিউজ হারুন উর রশিদ মনে করেন- আমাদের শিক্ষার দর্শন কী হবে, রাজনৈতিকভাবেই তা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার দর্শনটা কী— সেটা রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পদার্থ বিজ্ঞান কিংবা জীববিজ্ঞান- সেই জায়গাগুলো নিয়ে কিন্তু কথা ওঠে না। কথা ওঠে বাংলা বইয়ে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কী হবে, পাঠ্য বই কী হবে— এই দর্শনটি রাজনৈতিকভাবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
সাংবাদিক হারুন উর রশীদ বলেন, ‘রাজনীতি কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে? নিয়েছে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট কিন্তু বদলে গেছে। বাংলাদেশে একটি শক্তির উত্থান কিন্তু দেখা গেছে। সেটা হলো- হেফাজত। এখন আরেকটি শক্তির উত্থান হয়েছে, সেটা হচ্ছে জামায়াতে ইসলামি। এই দুই শক্তির মধ্যে সরকার ভর করছে কাকে? সরকার তাদের ওপরই ভর করছে, সরকারের যাদের দরকার আছে। দরকারের ক্ষেত্রে তারা জামায়াতকে নেবে না। তাহলে থাকলো কে? হেফাজত। আমি প্রমাণ করতে পারবো, জামায়াতকে সরকারের কাছে ভেড়ানোর কোনও সুযোগ নাই। কারণ, এখানে অনেকে বসে আছেন, তাদের (জামায়াত) ভিড়তে দেবেন না। সরকার হেফাজতকে কেন নেবে? হেফাজত একটি বড় গোষ্ঠী। তারা কিন্তু রাজনৈতিক দল নয়। তাদের সে ক্যাপাসিটি আছে। সরকার কেন ব্যাখ্যা দেবে পরিবর্তনের। ভোটের হিসাব রাখতে হলে সব ব্যাখ্যা দেওয়া যাবে না। আমরা জিজ্ঞেস করলে যখন কিছু বলে না, তখন বুঝে নিতে হয়।’
ডা.সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, ‘নতুন বইগুলো ২০১২ সালের কারিকুলাম অনুযায়ী করা হয়েছে। অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আমরা রাতের পর রাত পার করেছি। কোনও রকম গাইড বই এবং কোচিং ছাড়া শিক্ষার্থীরা নিজেরাই পুরোটা বই পড়ে ফেলবে, সেভাবেই সাজানো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাজটা ছিল এমন— যেন বিজ্ঞানের প্রতি আরও আগ্রহ বাড়ে শিক্ষার্থীদের। এই কাজটুকু করার জন্য একটাই বিধিনিষেধ ছিল, তা হলো কারিকুলামে হাত দেওয়া যাবে না।’
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক বলেন, ‘আমরা যখন বই পড়েছি, গান গেয়েছি কখনও কোনও শব্দের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার কোনও গন্ধ খুঁজিনি। আমরা শেখার জন্য পড়েছি। যদি পাঠ্যবইয়ের বিষয়গুলোকে জটিলভাবে দেখা হয়, তাহলে তো সমস্যা। এই জায়গাগুলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে মেনে নেওয়া দুঃখজনক।’
বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক রশিদ আল রুহানী বলেন, ‘হেফাজতের দাবি অনুযায়ী বইতে পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিবেদন করতে গিয়ে আমরা বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি। হেফাজতের ২৯টি দাবির সবগুলোই মানা হয়েছে এবার। কিছু ছোটখাটো ভুল ত্রুটি রয়েছে। হেফাজত একটি তালিকা দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপর এনসিসি থেকে অনুমোদন দেওয়া হলে পুস্তকে সংশোধন করা হয়। কিন্তু এরকম পরিবর্তন হঠাৎ কেন, এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা আমরাও খোঁজার চেষ্টা করি। আমরাও পাই না। প্রশ্ন করলে অস্বীকার করেন। কোনও উত্তর পাই না।’
আরও পড়তে পারেন: বিজ্ঞান বিষয়ে সহায়ক বইয়ের প্রয়োজন নেই: ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী