বিআরটিএ’র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৩ কোটি ২১ লাখ ৭ হাজার ৭৯২টি। এর মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি ৩৭ লাখ ৯ হাজার ৭৫৩টি। আর নিবন্ধিত গণপরিবহন ৭০ হাজার ৯২২টি। ব্যক্তিগত গাড়ি হিসেবে ধরা মাইক্রোবাস নিবন্ধিত হয়েছে ২৭ হাজার ৭৬৮টি। ফলে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা আরও বাড়বে। তবে সবচেয়ে বেশি নিবন্ধন হয়েছে মোটরসাইকেল, এই সংখ্যা ১ কোটি ৮৯ লাখ ৫ হাজার ৩৩৭।
নগর বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য— মূলত তিনটি কারণে প্রতি বছর ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ছে। প্রথমত, গণপরিবহনের অব্যবস্থাপনা ও পর্যাপ্ত গণপরিবহন না থাকা। দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিগত গাড়ির রাস্তায় অবৈধ পার্কি সুবিধা। তৃতীয়ত, সহজে নিবন্ধন ও সিএনজি জ্বালানির সুবিধা পাওয়া। এছাড়া মানুষের বৈধ-অবৈধ আয় বৃদ্ধির কারণেও ব্যক্তিগত গাড়ি কেনা হচ্ছে বেশি।
এ প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. সরওয়ার জাহান। তার মন্তব্য, সারাদেশে যেসব গণপরিবহন (বাস ও মিনিবাস) আছে সেগুলোর অধিকাংশই পুরনো ও ভাঙা, যা কোনোরকম চলছে। এর বাইরে যত্রতত্র স্থানে গাড়ি থামানো ও যাত্রী ওঠানামার কারণে মানুষ নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারে না। গণপরিবহনের এসব অব্যবস্থাপনার কারণে দিনে দিনে বেড়ে চলেছে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা।
গণপরিবহনে নিম্নমানের যাত্রীসেবা ও নারীরা হয়রানির শিকার হওয়ার কারণে ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ছে বলে মনে করেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামছুল হক। এই গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশ্বের অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে সহজে মানুষ গাড়ি কিনতে পারে। এছাড়া যে কেউ সহজে নিবন্ধন করতে পারে, সিএনজি জ্বালানি সংযোগও পাচ্ছে। অন্য দেশগুলোতে এমন সুবিধা নেই।’
সারাদেশে যাত্রীবান্ধব গণপরিবহন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি দিকে ঝুঁকছে— এমন মন্তব্য করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তার ভাষ্য, ‘গণপরিবহনগুলোতে যাত্রী সেবার মান দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। গাড়িগুলোতে আসনের চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি যাত্রী ওঠানো , যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করানো, চালক ও হেলপারদের দুর্ব্যবহারের কারণে ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ছে।’