সময়মতো খালেদা জিয়ার উকিল নোটিশের জবাব দেবো: প্রধানমন্ত্রী

 

গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় বক্তব্য রাখছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেওয়া উকিল নোটিশের জবাব সময়মতো দেবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদেশে খালেদা জিয়ার পরিবারের সম্পত্তি প্রসঙ্গে ‘বিদেশী গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সূত্র‘ ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার গোটা পরিবারের সম্পদের হিসাব বের করে আন্তর্জাতিক মিডিয়া। আর এটা বললাম কেন, এজন্য আমাকে নোটিশ দেন। এ রকম নোটিশ বহু দেখেছি। সময়মতো এই নোটিশের জবাব দেবো।’ শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার শুরুতে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রসঙ্গত, জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি সংক্রান্ত মন্তব্য করায় গত ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উকিল নোটিশ পাঠান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এতে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি সংক্রান্ত ‘অপবাদমূলক বক্তব্য’ দেওয়ার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খালেদা জিয়ার কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ারও আহ্বান জানানো হয়।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যদি সৎ সাহস থাকে, সত্যি কোনও অপরাধ করে না থাকেন, যেসব মিডিয়া খবর দিয়েছে, তাদের নোটিশ দিন। তাদের প্রতিবাদ জানান। তাহলে বোঝা যাবে, সততার একটা শক্তি আছে। তিনি সেটাও পারেননি।’

এ সময় ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচন কোনোভাবেই ভোটারহীন হয়নি। ওই নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে।খালেদা জিয়া ভোট ঠেকানোর নামে অগ্নিসংযোগ করেছেন। স্কুল পুড়িয়েছেন। প্রিসাইডিং অফিসার হত্যা করেছেন। এরপরও জনগণ রুখে দাঁড়িয়ে নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। জনগণ ভোট দিয়েছে বলেই আমরা চার বছর পূর্ণ করতে পারলাম। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিলেন বলেই ক্ষমতা ৫ বছর পূর্ণ করতে পারেননি। ৮৮ সালে নির্বাচন করে ৯০ সালে এরশাদের পতন হয়েছিল। ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহিন নির্বাচন করে খালেদা জিয়া দেড় মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেননি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত। গণতন্ত্রকে সুরক্ষা করা আমাদের লক্ষ্য ছিল। খালেদা জিয়া চেয়েছিলেন দেশে যেন গণতান্ত্রিক ধারা না থাকে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে যাদের জন্ম, তারা  গণতন্ত্রের বুলি আওড়ায় কিভাবে?’

বিদেশের জিয়া পরিবারের সম্পদ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন,  ‘খালেদা জিয়ার গোটা পরিবারের সম্পদের যে হিসাব এসেছে, তা তো বাংলাদেশের কেউ বের করেনি। এটা তো আন্তর্জাতিভাবে বেরিয়েছে। বিভিন্ন মিডিয়া বের করেছে। সেখান থেকে খবর এসেছে। সেই কথাটি বললাম কেন, এজন্য আমাকে আবার নোটিশ দেন। নোটিশ আমাকে দেবেন কেন? যেসব মিডিয়া এগুলো বের করেছে, যেসব দেশের সরকার এই তথ্যগুলো দিয়েছে, সেখানে তো নোটিশ দিতে যাননি। সেখানে নোটিশ দিয়ে বা তাদের কাছে প্রতিবাদ জানালে না হয় সত্যতা বুঝতাম। সব অন্তর্জ্বালা আমাকে দিয়ে মেটাতে চান তিনি। কারণ তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন, পারেননি।’

পদ্মা সেতু নিয়ে খালেদা জিয়ার মন্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া মানা করে দিয়েছেন, কেউ যেন ওই সেতুতে না ওঠেন। দেখি পদ্মা সেতু হোক খালেদা জিয়া নিজেই ওঠেন কিনা?’

খালেদা জিয়া অনবরত অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই মহিলা কত মিথ্যা কথা বলে। তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব কিছু মিথ্যাতে ভরা। মাথার চুল থেকে পা পর্যন্ত সব কিছু নকল। মিথ্যা কথা বলে, সব কিছু মিথ্যা ও জালিয়াতি করে। এখন আবার বলছেন, আমাদের নৌবাহিনীর জন্য আনা সাব মেরিন ফুটো হয়ে গেছে। এটা পানির নিচে ডুবে গেছে। সেনাবাহিনীর বউ এটা বোঝেন না, সাব মেরিন ডুবে যায় না, এটা পানির নিচে যায়। জানি না এই কথা শোনার পর আমাদের নৌবাহিনীর সদস্যরা কী বলবেন। আর দেশের জনগণই বা কী বলবে। বুঝতেছি না, তার মাথায় কিছু আছে কিনা। ডাক্তার দেখানো উচিত কিনা।তার মানসিক সমস্যা দেখা দিলো কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখা দরকার।’

খালেদা জিয়ার টুইট বার্তার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা টুইট করেছেন, আওয়ামী লীগ বুলেটে বিশ্বাস করেন, তিনি ব্যালটে বিশ্বাস করেন। আমি ৮১ সালে দেশে ফিরে বলেছিলাম, ক্ষমতা বদল হবে বুলেটে নয়, ব্যালটে। বুলেটের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে জিয়া, তার স্ত্রী তার থেকে আরও একধাপ এগিয়ে দেশ বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। বুলেটে-বন্দুকের নলে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তাদের মুখে এ কথা শোভা পায় না। আর জানি না, টুইট তিনি নিজে লিখেছেন, নাকি কাউকে দিয়ে করিয়েছেন কিনা, সন্দেহ।’

খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি ও তার ছেলে বার বার আমাকে তারা চেষ্টা করেছেন। তার স্বামী আমার বাবা ও মাকে হত্যা করেছেন। ভাই-বোনকে হত্যা করেছেন। এখন তিনি আমাকে বার বার হত্যার চেষ্টা করছেন। না পেরে অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রাম করেছে। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে মানুষের কল্যাণে বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ জেলজুলুম সহ্য করেছে। মিথ্যা মামলা আমাদের ওপরও কম হয়নি।’