সা’দকে ঠেকাতে পাহারা বসাবে বেফাক, সরকারের মধ্যস্থতা চায় তাবলিগের একাংশ

কাকরাইল মসজিদের মূল ফটকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা (ছবি-নাসিরুল ইসলাম)বিশ্ব ইজতেমায় ভারত থেকে আসা দিল্লির নিজামুদ্দিনের মুরব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলভির অংশগ্রহণ ঠেকাতে মাঠে নামছে বেফাক (বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড)। তাদের ডাকে ইজতেমা মাঠের মঞ্চ পাহারা দেবেন কওমি মাদ্রাসার চার হাজারের মতো শিক্ষার্থী। আর কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নিতে প্রস্তুত মাদ্রাসার দুই হাজার ছাত্র। এ অবস্থায় সরকারের মধ্যস্থতা চেয়েছে তাবলিগ জামাতের একাংশ।

ইতোমধ্যে কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের কাকরাইল মসজিদ ও ইজতেমা মাঠে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আল্লামা আবদুল কুদ্দুছ। বুধবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে এ কথা জানান তিনি।

এর আগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিক্ষোভ করা বেফাকের আলেম ও রাজধানীর কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে কাকরাইল ও টঙ্গী যাওয়ার নির্দেশ দেন মাওলানা আবদুল কুদ্দুছ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “মাওলানা সা’দকে কোনও অবস্থাতেই ইজতেমা মাঠে যেতে দেওয়া হবে না। আমাদের কওমি মাদ্রাসার ছেলেরা ইজতেমা মাঠের মঞ্চ পাহারা দেবে।”

বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জানান, মহাখালী এলাকার মাদ্রাসাগুলো থেকে দুই হাজার ছাত্র কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নেবেন। আর চার হাজারের মতো ছাত্র যাবেন ইজতেমা মাঠে। তারা আসবে উত্তরা ও টঙ্গী থেকে।

তবে কখন থেকে ইজতেমা মাঠে ছাত্ররা অবস্থান নেবেন এ বিষয়ে আবদুল কুদ্দুছ বলেন, ‘নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বেফাকসহ সারাদেশের কওমি মাদ্রাসার আলেমরা মাওলানা সা’দকে ইজতেমায় দেখতে চায় না।’

এ সময় তাবলিগের একটি অংশের ফয়সাল ও শুরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের বিষয়ে প্রতিবাদ করেন মাওলানা আবদুল কুদ্দুছ। বুধবার বিকালে সৈয়দ ওয়াসিফ বলেছিলেন, ‘মাওলানা সা’দ বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেবেন কিনা আলেমদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তার বিষয়ে আলেমদের যে বক্তব্য তা আমরা শুনবো, এরপর দেখা যাবে তিনি ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন কিনা।’

কিন্তু মাওলানা আবদুল কুদ্দুছের অভিযোগ— ‘সৈয়দ ওয়াসিফের সঙ্গে কোনও কথাই হয়নি আলেমদের। তিনি মিথ্যে কথা বলেছেন।’

পরে বুধবার সন্ধ্যায় সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে, তাই আমরা সরকারকে জানিয়েছি। এখন সরকারের একটা মধ্যস্থতা দরকার।’

মাওলানা সা’দকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে শুরু থেকে ওয়াকিবহাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা যে দুই ভাগ হয়েছে, আমরা উভয় অংশকেই মেলানোর অনেক চেষ্টা করেছি। এখন তাতে যদি কাজ না হয় তাহলে আমাদের কী করার আছে?’

এক্ষেত্রে সরকারের করণীয় কী? এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য— ‘তারা একত্রে হয়ে যা সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা সেটাই শুনবো। আমরা নাক গলাতে চাচ্ছি না। এখানে আমরা কোনও দলের সঙ্গে একত্র হতে চাই না। তাদের ওপর কিছু চাপিয়ে দিতে চাচ্ছি না।’

সমাধান না হলে সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘তারা একত্র হয়ে আসতে পারলে সমাধান হবে, না হলে না হবে। তবে আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত করবো। পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখবো।’

কাকরাইল মসজিদের অদূরে গেণ্ডারিয়ার মাদ্রাসার শতাধিক শিক্ষার্থী অবস্থান নিলেও পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয় (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি তো আশা করি, আল্লাহ একটা ব্যবস্থা করে দেবেন। তাদের মাথায় শুভবুদ্ধির উদয় হবে। দেখি।’

এদিকে বাংলা ট্রিবিউনের অপরাধ বিষয়ক প্রতিবেদক রাফসান জানি কাকরাইল মসজিদের সামনে থেকে জানান, সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে গেণ্ডারিয়ার একটি মাদ্রাসা থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী ট্রাকে চড়ে এসে নামার চেষ্টা করলেও পুলিশ তাদের অবস্থান করতে দেয়নি। সেখান থেকে কিছুদূর এগিয়ে মাদ্রাসার ছাত্ররা কয়েক মিনিট অবস্থান করলেও পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এ সময় তারা ‘সাদ সাহেবের আগমন, মানি না মানবো না’ স্লোগান দিচ্ছিল।