দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের শর্ত রেখে ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। মিয়ানমারের রাজধানী নেইপিদোতে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক শেষে মঙ্গলবার সকালে এ চুক্তি সই হয়।

বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক এবং মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থো নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। এর আগে সোমবার সারাদিন যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম সভায় ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট নিয়ে আলোচনা হয়।

মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুফিয়ুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “আমরা একটি ভালো চুক্তি করেছি, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। আমরা বলেছি যখন থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হবে তার দুই বছরের মধ্যে ‘প্রেফারেবলি’ শেষ হবে। এটি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে এবং মিয়ানমার এ প্রস্তাবে রাজি হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব করেছিলাম প্রতি সপ্তাহে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত পাঠাবো। কিন্তু তারা ওই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। তারা নিজেরা রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু ব্যবস্থা করেছে। ফলে প্রাথমিক অবস্থায় প্রতিদিন ৩০০ করে সপ্তাহে এক হাজার ৫০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে পর্যালোচনা করে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এই ব্যবস্থার অধীনে একটি পরিবারকে একটি ইউনিট হিসেবে গণ্য করা হবে অর্থাৎ একটি ফরমে পুরো পরিবারের তথ্য থাকবে এবং মিয়ানমার এটি গ্রহণ করবে। ফলে প্রক্রিয়াটি সহজ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাকে বাংলাদেশ কাজে লাগাবে এবং মিয়ানমার তাদের সময়মতো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।’

রাষ্ট্রদূত সুফিয়ুর বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশে আর না আসে তার ব্যবস্থা করবে মিয়ানমার। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সীমান্তে অপেক্ষমাণ ৭ হাজার রোহিঙ্গাকে তারা সেখান থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করবে। ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে রাখবে এবং এটি কখনোই ইন্টারনালি ডিসপ্লেসড ক্যাম্পে পরিণত হবে না বলে মিয়ানমার জানিয়েছে।’

রোহিঙ্গাদের তালিকা কবে দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যত শিগগিরই সম্ভব তালিকা দেওয়া হবে।’ 
এদিকে, মিয়ানমারে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গারা যাতে আর বাংলাদেশে আসতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মিয়ানমার সম্মত হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশে ট্রানজিট ক্যাম্প হবে ৫টি এবং মিয়ানমারে অভ্যর্থনা ক্যাম্প হবে দু’টি। বাংলাদেশ থেকে নিয়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের লা পো থং নামক একটি জায়গায় অস্থায়ীভাবে রাখা হবে। তারপর বাড়িঘর সংস্কার করে তাদের সেখানে পাঠানো হবে।

এতে আরও বলা হয়, সহিংসতায় যেসব শিশু অনাথ হয়েছে (বাবা-মা হারিয়েছে) এবং বাংলাদেশে যাদের জন্ম হয়েছে তাদেরকেও এই অ্যারেঞ্জমেন্টের আওতায় ফেরত পাঠানো হবে। এজন্য দু’টি টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে। একটি রোহিঙ্গাদের যাচাই বাছাইয়ের জন্য এবং অন্যটি প্রত্যাবাসনের জন্য।
আরও পড়ুন:
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি সই