মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা নিয়ে সংসদে বিভ্রান্তিকর তথ্যে ক্ষমা চাইলেন মন্ত্রী

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকমুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা নিয়ে সংসদের প্রশ্নোত্তরে বিভ্রান্তিকর তথ্য থাকায় ক্ষমা চেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলামের সম্পূরক প্রশ্নে বিষয়টি সংসদের নজরে আনলে মন্ত্রী এর জন্য ক্ষমা চেয়ে সংসদের কার্যবিবরণী থেকে তা একপাঞ্জ করতে স্পিকারের প্রতি অনুরোধ করেন। তবে স্পিকার প্রশ্নোত্তরের সময়ে এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না দিলেও পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে অন্য এক সদস্য বিষয়টি তুললে তিনি সিদ্ধান্ত নেন। স্পিকার বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অবশ্য বিভ্রান্তিকর তথ্যের জন্য মন্ত্রী ক্ষমা চাইলেও বিষয়টি তার মৌখিক বা লিখিত বক্তব্যে আসেনি। এসেছে হবিগঞ্জ-২ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আবদুল মজিদের প্রশ্নে। ওই সংসদ সদস্য তার প্রশ্নে উল্লেখ করেন, হবিগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া চা বাগানে ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল কর্নেল ওসমানির সভাপতিত্বে অনেক সেনা নায়ক ও জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। আবদুল মজিদ তার প্রশ্নে ঐতিহাসিক ওই স্থানটি সংরক্ষণ ও উন্নয়নের উদ্যোগ রয়েছে কিনা তা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে জানতে চান। মন্ত্রী তার লিখিত জবাবে ওই স্থানের বিষয়ে তার পরিকল্পনার কথা জানান।  তবে ‘৪ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা‘ বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।

পরে চাঁদপুর-৫ আসনের সরকারি দলের সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম সম্পূরক প্রশ্নে ফ্লোর নিয়ে বিষয়টি মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আবদুল মজিদ খানের প্রশ্নের বক্তব্যের সূত্র ধরে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মনে করি, স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা যদি স্বীকার করে নেই- এই মুক্তিযুদ্ধের জন্য আলাদা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।    ৪ এপ্রিল যদি মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়, তাহলে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা সংগ্রাম কি মুক্তিযুদ্ধ নয়? এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আর এটাকে যদি মেনে নেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রশ্ন তুলবে- বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার সঙ্গে এই ঘোষণার পার্থক্যটা কোথায়? আমি মনে করি, মন্ত্রী এই বিষয়টি স্পষ্ট করবেন। না হলে ইতিহাস বিকৃত থাকবে।

জবাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বিষয়টি নজরে আনার জন্য রফিকুল ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সংসদের কাছে ক্ষমা চান। মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি আমার এই ভুলের জন্য এই সংসদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। এটা যেহেতু পড়া হয়নি। আমারও মনে ছিল, কিন্তু বলার সময় ভুলে গেছি। তিনি (আবদুল মজিদ খান) যে কথা বলেছেন- ‘৪ এপ্রিল কর্নেল ওসমানীর সভাপতিত্বে অনেক সেনা ও জনগণের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেওয়া’, এটা ভুল তথ্য। তারা সেখানে বৈঠক করেছিলেন এটা ঐতিহাসিক সত্য।  মিটিং করে তারা রণকৌশল সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করেছিলেন। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণার কোনও সুযোগই ছিল না। মাননীয় স্পিকার, আমি অনুরোধ করবো আপনার যে ক্ষমতা রয়েছে, সেই ক্ষমতা বলে ওনার (আব্দুল মজিদ খান) এই বক্তব্যকে সংশোধন করে দিলে আমি ও সব মুক্তিযোদ্ধারা বাধিত থাকবো। সারাজাতি কৃতজ্ঞ থাকবে।’’


আরও পড়ুন: 
নিজ খরচে কারাভোগ করতে হবে প্রশিকার কাজী ফারুককে