দ্রুত বিচার আইনের সংশোধনী বিল পাস, শাস্তি আরও বাড়লো

জাতীয় সংসদ অধিবেশন (ছবি-ফোকাস বাংলা)

কোনও বিরোধিতা ছাড়াই বহুল আলোচিত দ্রুত বিচার আইন সংশোধন করে শাস্তির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন রবিবার বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়।

সাধারণত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বিলের ওপর সংশোধনীর প্রস্তাব দেয়। তবে এ বিলের ওপর দলটির কোনও সংসদ সদস্য সংশোধনী দেননি। এদিকে, জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর জন্য একজন স্বতন্ত্র ও ৬ জন বিরোধীদলীয় সদস্য নোটিশ দিলেও এদের মধ্যে পাঁচজনই সংসদে উপস্থিত ছিলেন না। বাকি দুজনের প্রস্তাব মন্ত্রী গ্রহণ না করলে তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়।

গত ২২ জানুয়ারি ‘আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) আইন-২০১৮’ সংসদে উত্থাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন। পরে বিলটি ৭ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

সংসদীয় কমিটি গত ২৮ জানুয়ারি বিলের প্রতিবেদন সংসদে জমা দেয়।

সংশোধনীতে অপরাধের শাস্তি ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৭ বছর করা হয়েছে। এছাড়াও এই আদালতে ‘বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত একজন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট’ নিয়োগের ক্ষমতা সরকারকে দেওয়া হয়েছে।

বিলে ২০০২ সালের এ সংক্রান্ত আইনের ৪(১) ধারা সংশোধন করে শাস্তির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বিদ্যমান সর্বনিম্ন দুই বছর এবং সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ডের বিধান ছিল। পাস হওয়া বিলে এই সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে সর্বনিম্ন দুই বছর ও সর্বোচ্চ সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি ‘আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ’ করলে দ্রুত বিচার আইনে তার বিচার হবে। যেমন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বা বেআইনি বল প্রয়োগ করে কোনও ব্যক্তি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদা, সাহায্য বা অন্য কোনও নামে অর্থ বা মালামাল দাবি বা আদায় বা আদায়ের চেষ্টা করলে তা এ আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়া স্থল, রেল, জল বা আকাশপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, ইচ্ছের বিরুদ্ধে যানের গতি ভিন্নপথে পরিবর্তন করা, ইচ্ছাকৃত কোনও যানবাহনের ক্ষতি করা; ইচ্ছাকৃতভাবে সরকার, ব্যক্তি বা কোনও প্রতিষ্ঠানের স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি ভাঙচুর করাসহ ৯ ধরনের অপরাধের জন্য এই আইনের অধীনে সাজা দেওয়া যাবে।

বিলে আদালত গঠনের বিধানেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিদ্যমান আইনের ৮(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘আদালত সরকার কর্তৃক নিযুক্ত একজন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়া গঠিত হইবে।’

সংসদে পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, ‘সরকার বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত একজন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটকে উক্ত আদালতের বিচারক নিযুক্ত করিবে।’

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০২ সালে দ্রুত বিচার আইন জারি করে দুই বছরের জন্য তা কার্যকর করা হয়। এরপর বেশ কয়েক দফা ওই আইনের মেয়াদ বাড়ায় সরকার। সবশেষ ২০১৪ সালের ৩ এপ্রিল এই আইনটি সংশোধন করে ৫ বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ায় বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মাধ্যমে গঠিত বর্তমান দশম সংসদে পাস হওয়া এটিই ছিল প্রথম বিল।

আইন সংশোধনের কারণ ব্যাখ্যা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে বলেছেন,‘আইনের ধারা ৪-এর উপ-ধারা (১) এ বিধৃত শাস্তির পরিমাণ কম থাকায় আইনটি সময়োপযোগীকরণ এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও অধিকতর উন্নতির লক্ষ্যে এ আইনে বিধৃত শাস্তির পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন।’

আরও পড়ুন: জেল কোনও আরাম আয়েশের জায়গা নয়: ওবায়দুল কাদের