‘সুন্দরবন ধ্বংস হলে দেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতি ভেঙে পড়বে’

সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন সাংবাদিক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদসুন্দরবন ধ্বংস হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশবাদীরা। দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিতেই সুন্দরবনের পাশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে বলে মনে করেন তারা। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে তারা এসব অভিমত জানান। সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে সেখানে নাগরিক সমাবেশ ও র‌্যালি হচ্ছিল। সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ (বাপা) ৫৭টি সংগঠনের উদ্যোগে এর আয়োজন করা হয়।

নাগরিক সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সাংবাদিক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন যদি ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে দেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের পরিবেশবাদীদের বলা হয়, আমরা নাকি উন্নয়নবিরোধী। আমরা মোটেও উন্নয়নবিরোধী নই। পরিবেশের উন্নয়নের সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নও চাই আমরা। সরকারকে আমরা জানাতে চাই— সুন্দরবনের ক্ষতি করে কোনও ধরনের প্রকল্প স্থাপন করা চলবে না।’

সমাবেশে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ বিশেষজ্ঞ রহমত উল্লাহ বলেছেন, ‘বিদ্যুৎ আমাদের সবারই দরকার। কিন্তু সুন্দরবনের পাশেই কেন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে? বনের পাশে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে।’

সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে র‌্যালিএই বিশেষজ্ঞের মন্তব্য— ‘যারা আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে, সেই ভারত নিজ দেশে ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লাভিত্তিক সব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিচ্ছে। শুধু ভারত নয়; জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, চীনও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের পরিকল্পনা করছে। তাহলে ভারত কেন বাংলাদেশে প্রকৃতি বিনাশী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে চায়? এর উদ্দেশ্য হলো, আমাদের দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দেওয়া।’

ভারতের আগ্রহের আরেকটি কারণ আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ রহমত উল্লাহ। তার ভাষ্য, ‘কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বানাতে বাংলাদেশে প্রতি মেগাওয়াটে খরচ হবে ১৯ কোটি টাকা, যা অন্যান্য দেশে তৈরি করতে ব্যয় হয় মাত্র ৮ কোটি টাকা। এদিক দিয়েও কিন্তু আমরা অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

এই সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাবি’র উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আজিজ, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান প্রমুখ।